মোঃ সিরাজুল মনির,নিজস্ব প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের পুলিশের ভুলের কারণে অনেক ভালো মানুষ হাজতবাস করার নজির রয়েছে। আবারো তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। শুধুমাত্র নাম অর্ধেক মিলেছে তাই তাকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের এই ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে কক্সবাজারের এক মহিলাকে গত দেড় বছর বিনা দোষে চট্টগ্রাম কারাগারে হাজতবাস করতে হয়েছে।
প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার (৩০) গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। পরে জামিনে গিয়ে পলাতক হন। এক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেলে আদালত তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে একই এলাকার হাসিনা বেগমকে (৪০)। সেই থেকে দেড় বছর ধরে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে আছেন। অথচ পরোয়ানামূলে কারাগারে যাওয়ার কথা হাসিনা আক্তারের। হাসিনা বেগমের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। তিনি বলেন, নামের প্রথম শব্দ মিল থাকার কারণে হাসিনা বেগমের এ অবস্থা। দোষ না করেও প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে হাজতবাস করছেন।
তিনি বলেন, যাচাই বাছাই না করে আমার মক্কেলকে গ্রেপ্তার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। বিষয়টি তখনই আদালতকে অবহিত করি। আদালত আমাদের আবেদন আমলে নিয়ে টেকনাফ থানা পুলিশকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে আদেশ দেন। ওটা জমা দেওয়ার কথা ছিল গত ৮ এপ্রিল। কিন্তু তারা পারেনি। অবশেষে ২ মে দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পরোয়ানামূলে হাজতে থাকা হাসিনা বেগম ঘটনার সময় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি হাসিনা আক্তার নয়। প্রকৃত আসামির সাথে আমার মক্কেলের নামের প্রথম অংশ ও স্বামীর নাম মিল থাকলেও ছেলে সন্তানের নামের মিল নেই। গ্রেপ্তার পরবর্তী ধারণ করা ছবিতেও তারা দুজন আলাদা মানুষ। এছাড়া আমার মক্কেলের বয়স ৪০ বছর। প্র্রকৃত আসামির বয়স ৩০ বছর।
তিনি আরো বলেন, আমার মক্কেল হাসিনা বেগমের স্বামীর নাম হামিদ হোছন। হামিদ হোছনের পিতার নাম মৃত কবির আহম্মদ। অন্যদিকে প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তারের স্বামীর নাম হামিদ হোসেন হলেও তার পিতার নাম মৃত আব্দুল জলিল।
আইনজীবী মুরাদ জানান, পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি আমরাও একটি আবেদন করেছি, যেখানে আমার মক্কেল হাসিনা বেগমের মুক্তি চেয়েছি। আদালত আগামী ৪ মে এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, পলাতক থাকা আসামি এবং বর্তমানে হাজতে থাকা আসামির বিষয়ে কারাগারে থাকা বালাম বই দেখে প্রতিবেদন দিতে চট্টগ্রাম কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সে অনুযায়ী কারাগার কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে আগামী ৪ মে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী এলাকা থেকে হাসিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ মামলায় ৬ মাসের মতো কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পান। ২০১৯ সালের ১ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ৯ (খ) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
উল্লেখ্য, কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার এজহার হোসেনের মেয়ে। প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার একই এলাকার হামিদ হোসেনের স্ত্রী।