অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪৬৫ শতাংশ। এই গৌরবের ধারাবাহিকতার মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আজ দেশের ৯৮ ভাগ আমদানি-রপ্তনি কনটেইনারবাহী পণ্য এবং ৯২ ভাগ খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চাকা খ্যাত এই চট্টগ্রাম বন্দরের আজ (২৫ এপ্রিল, রবিবার) ১৩৪ তম বর্ষপূর্তি।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ২৫ এপ্রিল পালন হচ্ছে বন্দর দিবস হিসেবে। কিন্তু করোনার মহামারির কারণে গতবছরের ন্যায় এবারও বন্দর দিবস পালনের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নেই কোন বিশেষ আয়োজন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবছর চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনাড়ম্বরভাবে কোন আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত পালন করার পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার এই চট্টগ্রাম বন্দর গত ২০১৯ সালে ৩১ লক্ষাধিক কনটেইনার হ্যান্ডেল করে ৩ মিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করেছিল। ফলে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা লয়েড লিস্ট রেজিস্টারের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ত কনটেইনার বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। কিন্তু বৈশ্বিক করোনার মহামারির কারণে গত বছর (২০২০) চট্টগ্রাম বন্দর ২৮ লক্ষাধিক কনটেইনার হ্যান্ডেল করার করণে ৩ মিলিয়ন ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ে। এর মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
২০০৯ সালে প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম বন্দর ১০০টি কনটেইনার পোর্টের তালিকায় ৯৮তম অবস্থান নিয়ে নিজের স্বীকৃতি অর্জন করে। মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭৬টি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৬ টিইইউস এবং কার্গো হ্যান্ডলিং হয় ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। গত ২০২০ সালের একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬৬টি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ টিইইউস এবং কার্গো হ্যান্ডলিং হয় ১ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। ফলে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিংয়ে প্রবৃদ্ধি দাড়ায় প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
কোভিড-১৯ এর কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক বন্দরেরই কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম বন্দর সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টাই চালু ছিল। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়কালে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ডেলিভারি শূন্য অবস্থা হতে অত্যন্ত অল্প সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছিল। বিগত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে চলেছে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ।
প্রসঙ্গতঃ একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তাবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া শুধু গতবছরেই বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে শূন্য পাইরেসী (দস্যুতা), লয়েড লিস্টে ৬ ধাপ এগিয়ে ৬৪ হতে ৫৮ তে উন্নীত হওয়া, পরীক্ষমূলকভাবে ভারতের কলকাতা বন্দর হতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য ট্রানজিট (পণ্য পরিবহন) চালু করে নতুন রেকর্ড করেছে। এই উল্লেখযোগ্য অর্জনের কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়নে পরিকল্পনা কমিশন চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্ব ও ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে, একই সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে অনূকরণীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করে।