এরপর জুন থেকে ধীরে ধীরে অর্ডার বাড়তে থাকলেও চলতি এপ্রিল মাসের লকডাইনের কারণে আবারো হোঁচট খায় চিংড়ি রপ্তানি। এতে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে চিংড়ি রপ্তানিতে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আগে ১৪ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি কন্টেইনার জাহাজের ভাড়া ছিল ১৮০০ ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬০০০-৬৫০০ ডলার। তাছাড়া ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দাভাব বিরাজ করছে। আগের মতো অর্ডার নেই। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে ঠিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ মৎস্য রপ্তানি হয়, তার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি হচ্ছে চিংড়ি। মূলত লোনা পানির বাগদা, মিঠা পানির গলদা ও সামুদ্রিক অন্যান্য জাতের চিংড়ি রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু রপ্তানি কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্য রপ্তানিকারক, আড়তদার ও হ্যাচারি মালিক।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হচ্ছে হিমায়িত চিংড়ি। দেশে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয় কক্সবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোর জেলায়। বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে অন্যতম সম্ভাবনাময় এ খাত জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দাভাব এবং করোনার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। চিংড়ির প্রধান ক্রেতা আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র। সেখানকার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকেরা এসব চিংড়ি আমদানি করে থাকেন। কিন্তু করোনার কারণে অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চিংড়ি রপ্তানিতে হোঁচট খাচ্ছে রপ্তানিকারকরা।
বিগত বছরগুলোতে এ অঞ্চলের সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি গ্রিস, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বেলজিয়াম, জাপান, ফ্রান্স, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, মরিশাস, চীন, ইতালি, ডেনমার্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিতে সাফল্য এলেও করোনার কারণে শিপমেন্ট কমে যাওয়ায় চিংড়ি রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ চট্টগ্রাম অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে চট্টগ্রাম থেকে মৎস্য রপ্তানি হয় জানুয়ারিতে ৩২৫৮ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারিতে ২৭৩০ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন, মার্চে ২২৫১ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন, এপ্রিলে ৬৯৮ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন, মে মাসে ৯৯৫ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন, জুনে ১৬২৯ দশমিক ৬২০ মেট্রিক টন, জুলাইয়ে ১৪২১ দশমিক ৭৪৩ মেট্রিক টন, আগস্টে ১৫৮০ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বরে ২১৬৪ দশমিক ১৬৫ মেট্রিক টন, অক্টোবরে ২১৬২ দশমিক ০১২ মেট্রিক টন, নভেম্বরে ৩২২৯ দশমিক ৭ মেট্রিক টন ও ডিসেম্বরে ৪০৭২ দশমিক ৬৮৫ মেট্রিক টন মৎস্য রপ্তানি হয়। এছাড়া চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মৎস্য রপ্তানি হয় ৩১১৫ দশমিক ৫৭৮ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারিতে ২৪৮২ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন ও মার্চে ২৯৭৫ দশমিক ৪৪৪ মেট্রিক টন।
জানতে চাইলে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাজা খসরু বলেন, ‘করোনার ধাক্কা কাটিয়ে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে নতুন করে লকডাউনের কারণে রপ্তানি কিছুটা কমার শঙ্কা রয়েছে।