হাবীবুল্লাহ মিসবাহ, রাজস্থলী,রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিঃ
পাঃংছোয়াই” এর অর্থ ফুল ছিঁড়ার দিন। এটি সাধারণত ১২ এপ্রিলের রাতেই হয়ে থাকে। শীতের পর বসন্তের আগমনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতেও বসন্তের ছোঁয়া লাগে, ফলে পাহাড়ে দেখা যায় নানা রকম ফুলের সমারোহ। নানা রকমের ফুলে গ্রামের চারপাশে ঘিরে থাকা পাহাড়গুলো ছেয়ে যায়। আর এই ফুলগুলো সাংগ্রাইয়ের আগে ছিঁড়া হয় না একদম “পাঃংছোয়াই” এর রাতেই পাহাড় থেকে ফুলগুলো ছিঁড়ে বাড়িগুলো সাজানো হয়। পাহাড়ে অনেক ফুল থাকলেও কিছু নির্দিষ্ট ফুল আছে যেগুলো দিয়েই ঘরবাড়ি গুলো সাজানো হয়।
তন্মধ্যে “সাংগ্রাই পাঃং” নামে সাদা রঙের ফুলটিই সবচেয়ে প্রিয় হয়ে থাকে। সবাই মূলত এই ফুলকে প্রধান করেই “পাঃংছোয়াই” এর পরের দিনে গিন্নীরা তাদের ঘরগুলো সাজাতে থাকে। এই ফুল ছিঁড়ার কাজটি মূলত মারমা তরূণ-তরূণীরাই করে থাকে। এই “পাঃংছোয়াই” কে কেন্দ্র করে মারমা তরূন-তরূণীরা এর আগের রাতে নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সারারাত জেগে পিঠা বানায়, আবার অনেকে মারমাদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলার ব্যবস্থা করে, অনেকে মারমা নাচ-গান করে থাকে। মূলত মারমা তরূণ-তরূণীরা সারারাত জেগে থাকার জন্য নানা কিছুর আয়োজন করে। এরপরে আলো ফোটার আগেই একদম ভোর-সকালে দলে দলে পাহাড়ে গিয়ে “সাংগ্রাই পাঃং” তুলে নিয়ে মায়ের হাতে তুলে দেয়।
গিন্নীরা সকাল হলেই সুতা দিয়ে ফুলগুলো সাজাতে থাকে। প্রথমে বুদ্ধকে ফুল পূজা করে এরপর বাড়ির প্রতিটি দরজায় “সাংগ্রাই পাঃং” দিয়ে সাজায়। বাড়ির দরজায় সাজানো ফুলগুলো দিয়েই বুঝতে পারা যায় সাংগ্রাই অর্থাৎ নতুন বর্ষবরন শুরু হয়ে গেছে।
শুধু তরূন-তরূণীরাই নয় মারমাদের ছোট ছেলেমেয়েদেরও এই পাঃংছোয়াই নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ থাকে। কিন্তু মারমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা ছোট ছেলেমেয়েদেরকে সবসময় “ফ্রুজুমা”(মারমা ডাইনী) এর ভয় দেখিয়ে রাখে। এমনকি এই “পাঃংছোয়াই” নিয়ে অনেক কিচ্ছা কাহিনীও আছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ফ্রুজুমা-র ফাঁদে আটকে যাওয়া। ফ্রুজুমা “সাংগ্রাই পাঃং” এর লোভ দেখিয়ে কোন একজনকে দলছুট করে এমন গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাবে যে তা থেকে দিনের আলো ফোটার আগে কখনোই আর মুক্তি পাওয়া যাবে না কারণ ফাঁদে পড়ার পর যেখানেই যাবে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গলই পাবে। আর সাংগ্রাই পাঃং সাধারণত সকালের আলো ফোটার আগেই ছিঁড়তে হয়। এই কিচ্ছা দিয়েই মারমা জাতিগোষ্ঠীর মা-বাবারা তাদের সন্তানদের আগলে রাখে।