লেখক:- তারিকুল আলম,
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,
নোয়াখালী।
আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে নারী সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণ অধিকার আদায় ও কল্যাণে পারিবারিক আদালত এক যুগান্তরকারি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বিবাহিত নারী তার হারানো মর্যাদা ও অধিকার ফিরে পায় এবং আর্থ- সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটায়। ইসলামী আইন, হিন্দু আইন, দেওয়ানী কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, পারিবারিক আইন প্রভৃতি সমন্বয়ে পারিবারিক আদালতের বিচার্য বিষয় সমূহ সংকলিত হয়েছে।
১) প্রতিষ্ঠা ও আদালত স্থাপন-এ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ সালের ১৭ই মার্চ পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স নামে অভিহিত। এই অধ্যাদেশ রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য এলাকার জেলা সমূহ ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য। পারিবারিক আদালত বলতে এ অর্ডিন্যান্সের অধীনে গঠিত পারিবারিক আদালতকে বুঝায়। যতগুলো সহকারী জজ আদালত রয়েছে সবগুলোই আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে গন্য হবে।
২) আদালতের এখতিয়ার- ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অর্ডিন্যান্স এর বিধানাবলী সাপেক্ষে পারিবারিক আদালতের নিম্নলিখিত বিষয় হতে উদ্ভূত বা সম্পর্কিত যে কোন মামলা গ্রহন বিচারকার্য সম্পাদান ও মামলা নিস্পত্তি করতে পারবেন-
(ক) বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক)- মুসলিম আইনের ৩০৭ ধারায় বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে বিবাহ চুক্তি ভঙ্গ এবং ৩০৮ ধারায় তালাক দ্বারা বিবাহ চুক্তি ভঙ্গের কথা বলা আছে। স্বামী ও স্ত্রী স্বেচ্ছায় আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া এবং যেকোন পক্ষ আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ নাকচ করতে পারে। আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বামীর ইচ্ছানুসারে যখন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, তখন তাকে বলে তালাক। তালাক মৌখিক বা লিখিত যেকোন প্রকার হতে পারে। মৌখিক তালাকে স্বামী তালাকের নির্দিষ্ট বাক্য সুস্পষ্টভাবে স্বজ্ঞানে উচ্চারণ এবং তদনুসারে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক সম্পন্ন হয়। মৌখিক তালাকের লিখিত দলিল হচ্ছে তালাকনামা। কাজীর উপস্থিতিতে বা স্ত্রীর পিতা অথবা অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষীর উপস্থিতিতে তালাকনামা সম্পাদিত হলেই তালাক কার্যকর হয়। মুসলিম আইনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রীরও তালাক দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে; যেমন (এ) ৪ বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে; (বি) ২ বছর পর্যন্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ না দিলে; (সি) ৭ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য স্বামীর কারাদন্ড হলে; (ডি) স্বামীর পুরুষত্বহীনতা; (ই) স্বামী উন্মাদ বা সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে; (এফ) স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে; (জি) স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পুনরায় বিয়ে করলে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করে ডিক্রি প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেন। আর কাবিননামায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে (তালাকে তৌফিজ) স্ত্রী স্বামীকে ত্যাগ করতে পারেন।
(খ) দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার -কোনো বৈধ কারণ ব্যতীত স্ত্রী স্বামীর সংসার ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিলে এবং স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বর্জন করলে স্বামী পারিবারিক আদালতে স্ত্রীকে ফেরত পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারেন। তবে এ মামলা শুধু বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থাতেই করতে পারেন। বিয়ে ভেঙে গেলে বা তালাক হয়ে গেলে তা করা যাবে না।
(গ) মোহরানা -বিয়েতে মোহরানা বা দেনমোহর নির্ধারণ মুসলিম আইনে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। কাবিননামায় দেনমোহরের পরিমাণ উল্লেখ থাকে। দেনমোহর নির্ধারিত হবে কনের রূপ-গুণ এবং সামাজিক মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে। দেনমোহরের পরিমাণ সর্বোচ্চ কত হবে তার কোনো সীমারেখা নেই, তবে সর্বনিম্ন ১০ দিরহামের ( ১ দিরহাম=২৩.০৬ টাকা) নিচে নয়। যত বেশি দেনমোহর নির্ধারিত হোক না কেন স্বামীকে অবশ্যই তা পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর সকল অবস্থায় স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ। দেনমোহরের দাবিতে বিধবা স্ত্রী তার মৃত স্বামীর পুরো সম্পত্তি নিজের দখলে রাখতে পারে যতক্ষণ না তার দেনমোহর শোধ করা হয়।
(ঘ) ভরণপোষণ (নাফাফা)- ইসলামী আইনের পরিভাষায় ভরণপোষণকে ‘নাফাফা’ বলা হয়। নাফাফার আওতায় রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান। তিনটি কারণে মানুষের ওপর নাফাফার দায়িত্ব বর্তায়। (১) প্রথম কারণ বিবাহ, (২) দ্বিতীয় কারণ আত্মীয়তা এবং (৩) তৃতীয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার। যতদিন পর্যন্ত পুত্র সাবালক না হয় এবং কন্যার বিবাহ না হয় ততদিন পিতা সন্তানদের ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা মেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতার। পিতা অক্ষম ও দরিদ্র হলে মা সন্তানের ভরণপোষণ করবে। বাবা-মা দুজনেই অক্ষম হলে পিতামহের ওপর এ দায়িত্ব বর্তায়। ভরণপোষণের প্রথম ও প্রধান হকদার স্ত্রী। স্ত্রী সর্বাবস্থায় স্বামীর কাছে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। স্বামীর সঙ্গতি থাক বা না থাক স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে স্বামী বাধ্য। স্ত্রী ধনী এবং সম্পদশালী হলেও ভরণপোষণের অধিকার বাতিল হয় না। বিবাহ বিচ্ছেদের পর ৩ মাস পর্যন্ত ‘ইদ্দকালীন’ সময়ে স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য। হিন্দু ও খ্রিস্টান আইনে ভরণপোষণকে বলে খোরপোষ।
(ঙ) অভিভাবকত্ব – স্বাভাবিক অবস্থায় পিতা নাবালক সন্তানের দেহ ও সম্পত্তির আইনসম্মত অভিভাবক। পিতার অবর্তমানে এ দায়িত্ব মায়ের ওপর বর্তায়। মায়ের অবর্তমানে বা অপারগতায় নাবালকের মাতাপিতার নিকটতম আত্মীয় অভিভাবক হতে পারেন। এমনকি প্রয়োজনে সরকারও নাবালকের দেহ ও সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্ত হতে পারে। তবে পিতার অবর্তমানে নাবালকের দেহ ও সম্পত্তির অভিভাবকত্ব সরাসরি সরকারের কাছে চলে আসে। পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ জারি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জেলা জজ নাবালকের দেহ ও সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্ত হতেন। বর্তমানে এ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতের সহকারি জজের ওপর অর্পিত হয়েছে। কোনো নাবালকের দেহ বা সম্পত্তি অথবা উভয়ের অভিভাবক হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য ১৮৯০ সালের গার্জিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট অনুযায়ী আদালতে আবেদন করতে হয়। তবে ইসলামী আইনানুসারে নাবালকের অভিভাবক হওয়ার অধিকারী ব্যক্তি আদালতের আদেশ পাওয়ার আগেই অভিভাবক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
৩) মামলা দায়েরকরণ- ২৫/- টাকা কোর্ট ফি দিয়ে মামলা রুজু করা যাবে। মামলা করার এখতিয়ারভূক্ত বিষয় হচ্ছে- (ক) নালিশের কারণ সম্পূর্ণ বা আংশিক রূপে সৃষ্টি হয়েছে এবং (খ) উভয়পক্ষে একসাথে বসবাস করে বা পূর্বে বসবাস করে ছিলেন।
৪) সমন ও নোটিশ জারিকরণ- পারিবারিক আদালতে কোন আরজি পেশ করা হলে আদালত (ক) বিবাদীকে হাজির হবার জন্য একটা তারিখ নির্ধারণ করেন যা সাধারণভাবে ৩০দিনের বেশি হয় না। (খ) নির্দিষ্ট তারিখে বিবাদিকে আদালতে হাজির হয়ে দাবি সম্পর্কে জবাবদান করবার জন্য সমন জারি করেন এবং (গ) প্রাপ্তি স্বীকার পত্রসহ বেজিস্ট্রার্ড পোস্টে বিবাদীকে মামলার নোটিশ প্রদান।
৫) লিখিত জবাব- নির্দিষ্টি তারিখে বিবাদীর হাজির হবার সময় বাদী ও বিবাদী উভয়ই আদালতে উপস্থিত থাববেন এবং বিবাদী তার আত্নপক্ষ সমর্থনের জন্য হাজির করা এমন সাক্ষীদের নাম ও ঠিকানাসহ তফসিল সংযুক্ত করতে হয়।
৬) অনুপস্থিতির ফলাফল- নির্দিষ্ট দিনে মামলা শুনানীর সময় কোন পক্ষ উপস্থিত না থাকলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। অন্যদিকে মামলা শুনানীর সময় বাদী হাজির হলে এবং বিবাদী হাজির না হলে তাহলে আদালত একতরফাভাবে মামলা চালাতে পারেন।
৭) পূর্ব বিচার পরিচালনা- (ক) লিখিত বিবৃতি পেশ করার পর পারিবারিক আদালত মামলার পূর্ব বিচার শুনানির জন্য একটা তারিখ ধার্য করেন যা সাধারণভাবে ৩০দিনের বেশি হয় না। (খ) পূর্ব বিচার শুনানির দিনে আদালত উভয়পক্ষ কর্তৃক পেশাকৃত আরজি; লিখিত বিবৃতি এবং সাক্ষ্যের সংরক্ষিত বিবরণ ও দলিল পত্রাদি পরীক্ষা -নিরীক্ষা করেন এবং আদালত যথাযথ মনে করলে উভয় পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করেন। (গ) পূর্ব বিচার শুনানির সময় আদালত উভয় পক্ষের মধ্যেকার বিবাদমান বিষয়গুলো নির্ধারণ করেন এবং সম্ভব হলে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা বা মীমাংসার চেষ্টা করেন।
৮) রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার -মামলা দায়েরের পর বিবাদী পক্ষকে নোটিশ/সমন প্রদান, বিবাদী পক্ষের জবাব দেবার পর মামলাটি বিচারের জন্য ধার্য্য হয়। পারিবারিক আদালত উপযুক্ত মনে করলে এই অধ্যাদেশের অধীনে মামলার সম্পূর্ণ বিচার কার্যক্রম বা যে কোন অংশে রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত করতে পারেন। যে বিষয়সমূহ নিয়ে পারিবারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হয় সেই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন প্রকৃতির এবং সেই ভিন্ন প্রকৃতির কারণে পারিবারিক আদালতের বিচার ভিন্ন অবস্থায় হতে পারে। স্বামীর সাথে স্ত্রী, স্ত্রীর সাথে স্বামীর বা সন্তানের সাথে পিতামাতার বিরোধ অনেক সময় জনসমক্ষে প্রকাশ করা বিব্রতকর হয়ে পড়ে। এ সমস্ত কারণে আইন এই মামলা রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারের ব্যবস্থা রেখেছে। আপোস বা পুনর্মিলনের জন্য আদালত খাস কামরায় উভয় পক্ষকে বা যে-কোনো পক্ষকে ডেকে চেষ্টা করতে পারেন অথবা আদালত কোনো মহিলা সাক্ষীর সাক্ষ্য খাস কামরায় গ্রহণ করতে পারেন। আদালত নিজের ইচ্ছায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে বা খাস কামরায় বিচারানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারেন না৷ এজন্য আদালতকে উভয় পক্ষ কর্তৃক অনুরোধ করতে হবে। পক্ষগণ আদালতের কাছে আবেদন না করলে আদালত খাস কামরায় সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন না।
৯) বিচার সমাপ্তি- সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করার পর রায় ঘোষণার পূর্বে পারিবারিক আদালত পক্ষগণের মধ্যে শেষ পর্যায়েও আপোষ মীমাংসার জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যদি অনুরূপ আপোষ বা পুনর্মিলন সম্ভবপর না হয়, তা হলে আদালত তখনই অথবা ভবিষ্যতে অনধিক সাত দিনের মধ্যে যে-কোনো দিনে রায় ঘোষণা করবেন এবং ডিক্রি প্রদান করবেন।
১০) আপোষমূলক ডিক্রি- পারিবারিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তির দুটি পদ্ধতি আছে। (ক) প্রথমটি হচ্ছে আপোস, (খ) দ্বিতীয়টি বিচার। আপোষ বা মীমাংসার মাধ্যমে কোনো বিরোধের সমাপ্তি হলে উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত আরোষ মীমাংসার আলোকে আদালত মামলার ডিক্রি বা সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।
১১) রায় লিপিবদ্ধকরণ-পারিবারিক আদালতের রায় বিচারক নিজেই লিখবেন। তার লেখার কোনো অসুবিধা হলে তিনি ডিক্টেশন দিবেন এবং অন্য কেউ লিখে দিবে। অতঃপর তিনি সেটি প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা করবেন এবং তারিখসহ স্বাক্ষর করবেন। রায় আদালতের ভাষায় লিখতে হবে। আপিলযোগ্য সকল রায় ও আদেশসমূহের ক্ষেত্রে রায় লিপিবদ্ধকরণে পারিবারিক আদালতের বিচারের বিষয়বস্তু, সিদ্ধান্ত ও তার যুক্তি এবং কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে।
১২) আপিল – পারিবারিক আদালতের রায়, ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করা যাবে। জেলা জজ আদালত দেওয়ানি আদালত বিধায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইন এই আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল চলে না-
ক. স্বামী যদি স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করেন বা উক্ত সম্পত্তির ওপর স্ত্রীর আইন সম্মত অধিকার প্রয়োগে বাধা দেন। এই অভিযোগে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করলে এই কারণে ব্যতীত অন্য কোনো কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না।
খ. মোহরানার টাকা ৫,০০০/- টাকার উর্ধ্বে না হলে আপিল চলবে না। আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের রায়, ডিক্রি বা আদেশ প্রদানের সময় হতে এ সব কপি সংগ্রহ ৩০ দিনের মধ্য করতে হবে।
১৩) সাক্ষীদের সমনের ক্ষমতা- আদালত কোন ব্যক্তিকে হাজিরের সাক্ষ্যের বা দলিল দাখিলের সমন ইস্যু করতে পারে।
১৪) পারিবারিক আদালত অবমাননা- কোন বৈধকরণ ব্যতিত কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে পারিবারিক আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়-(ক) পারিবারিক আদালতের প্রতি অপমান প্রদর্শন করলে; (খ) পারিবারিক আদালতের কাজে বাঁধার সৃষ্টি করলে; (গ) পারিবারিক আদালত কর্তৃক জিজ্ঞাসিত কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করলে; (ঘ) সত্য না বলতে চাইলে বা আদালত কর্তৃক কোন বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করলে এই ধরণের আদালত অবমাননার জন্যে পারিবারিক আদালত তৎক্ষণাৎ বিচার করতে পারেন ও ২০০/- টাকা জরিমানা করতে পারেন।
১৫) প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হওয়া- এ অধ্যাদেশের অধীনে সাক্ষী ছাড়া অন্য কোন লোককে পারিবারিক আদালতে উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়লে এবং তিনি যদি একজন পর্দানশীল মহিলা হন তাহলে আদালত তাকে তার ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিনিধিকে প্রতিনিধিত্ব করবার অনুমতি দিতে পারেন। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা ঃ সরকার সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে এই অধ্যাদেশের কার্যকরি করার জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারেন।
১৬) কোন আদালতে মামলা দায়ের করবেন- পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৬ ধারা অনুযায়ী-
(ক). নালিশের কারণটি যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে উদ্ভূত হয়েছে।
(খ). যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে মামলার পক্ষগণ বসবাস করেন অথবা সর্বশেষ একসঙ্গে বসবাস করেছিলেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ, দেনমোহর অথবা ভরণপোষণের মামলার ক্ষেত্রে যে এলাকায় স্ত্রী সাধারণত বসবাস করছে সেই এলাকার আদালতেও মামলা করা যাবে।
১৭) মামলার আরজিতে কি কি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে- আরজিতে বিরোধ সম্মন্ধীয় বিষয়ের বিস্তারিত তথ্যসহ একটি তফসিল দিবে হবে যেখানে আরজির সমর্থনে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক সাক্ষীগনের নাম ও ঠিকানা অর্ন্তভূক্ত থাকবে। তবে শর্ত থাকে যে,বাদী মামলা প্রমানের প্রয়োজনে আদালতের অনুমতিক্রমে মামলার যে কোন স্তরে যে কোন সাক্ষী ডাকতে পারে যদি আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে উক্ত সাক্ষ্য নেয়া উপযুক্ত বলে মনে করেন। এছাড়া মামলার আরজিতে যে বিষয়গুলির উল্লেখ থাকতে হবে-
ক. যে আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে সে আদালতের নাম;
খ. বাদীর নাম, বর্ণণা ও বাসস্থান;
গ. বিবাদীর নাম, বর্ণণা ও বাসস্থান;
ঘ. বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা অপ্রকৃতিস্থ হলে সে সর্ম্পকিত বর্ণণা;
ঙ. নালিশের কারণ সর্ম্পকিত তথ্য সহ, যে স্থানে ও যে তারিখে কারণের উদ্ভব হয়েছিলো তার বিবরণ;
চ. সংশ্লিষ্ট আদালতের যে মামলাটি পরিচালনার এখতিয়ার আছে সে সর্ম্পকিত তথ্য;
ছ. বাদীর প্রার্থিত প্রতিকার;
জ. বাদী তার দাবীর সমর্থনে যদি কোন দলিলের উপর নির্ভর করে এবং দলিলটি যদি তার দখলে থাকে তবে আরজি উত্থাপনের সময় দলিলটি আদালতে পেশ করতে হবে। দলিলটির অবিকল ফটোকৃত প্রতিলিপি আরজির সারথ নথিভূক্তির জন্য দিতে হবে;
ঝ. বাদী তার দাবীর সমর্থনে এমন কোন দলিলের উপর নির্ভর করে এবং দলিলটি যদি তার দখলে না থাকে সেক্ষেত্রে দলিলটি কার দখলে বা আয়ত্বাধীনে আছে সে বিষয়টি উল্লেখকরত আরজি দাখিল করতে হবে;
ঞ. মামলার বিবাদীগনের উপর জারীর জন্য বিবাদীগণের সংখ্যার দ্বিগুণ সংখ্যক তপসিলসহ আরজির সত্যায়িত প্রতিলিপি এবং দলিলের তালিকা দ্বিগুণ পরিমাণ আরজির সাথে থাকবে।
১৮) যে সকল কারণে আরজি অগ্রাহ্য বা নাকচ হতে পারে-
ক. পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৬ এর ৭ উপধারা অনুযায়ী যেক্ষেত্রে আরজির সাথে তফসিল দেয়া হয়নি;
খ. যেক্ষেত্রে সমন জারির খরচ এবং নোটিশের জন্য পোস্টাল খরচ পরিশোধ করা হয়নি;
গ. যেক্ষেত্রে ২২ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত কোর্ট ফি দেয়া হয়নি।
তথ্যসূত্র:
(i) www.lawjusticediv.gov.bd
(ii) www.banglapedia.org
(iii) www.bdlaws.minlaw.gov.bd