গেল বছরেও একই সময়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ওলট-পালট করে দেয় গোটা দেশ। ঠিক এই সময়ে এসে খবর আসছে, নতুন রূপে আঘাত হানতে পারে করোনা। যাকে স্বাস্থ্য বিভাগ দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবেই উল্লেখ করছে।
কিন্তু সেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করতে কেমন প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ? করোনা চিকিৎসা প্রদানে চট্টগ্রাম কতটুকু প্রস্তুত, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় ঢেউ আসার শঙ্কা থেকে প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। স্থলবন্দর কিংবা বিমান বন্দর সর্বত্রই স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়েও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় হাসপাতাল সুবিধার পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের পাশাপাশি বিমান বন্দরে যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে।
প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিমানবন্দর দিয়ে যারা দেশে প্রবেশ করছেন, তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন থাকতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ইংল্যান্ড থেকে যারা আসছেন, তাদের রেলওয়ে হাসপাতাল কিংবা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। বাকিদের বাসা-বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে। এটা বহু আগে থেকেই চালু রয়েছে। তবুও এখন সংশ্লিষ্টদের জোর দেয়া হচ্ছে, যেন এ বিষয়ে ছাড় দেয়া না হয়।’
অন্যদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক ব্যবহারে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রশাসনও বিধি নিশ্চিতে মাঠে নেমেছে। যদিও প্রথম দিকে সাধারণ মানুষকে শুধুমাত্র সতর্ক করা হলেও এখন পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে না। তবে সামনে জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, প্রস্তুতি আগে থেকে ছিল এবং তা এখন আরও জোরদার হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মানুষ যদি একটু সচেতন হয়, তাহলে এ ঢেউ আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারাই আসবে, অবশ্যই তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। তারও আগে আসা এসব প্রবাসী বা যাত্রীদের বিমান বন্দরে রেখেই ৫ থেকে ১০ মিনিট কোভিড সম্পর্কে কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। কেননা- যে কাউকেই বুঝিয়ে বললে, সে নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকে। কেউই চায় না, নিজে বা তার পরিবারের কোন সদস্যই করোনায় আক্রান্ত হোক। এ বিষয়টি এখন থেকেই জোর দেয়া উচিত।’
নতুন করে প্রস্তুত দুই হাসপাতাল : রোগীর সংকটে মাস কয়েক আগেও প্রায়ই বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নগরীর খুলশী থানাধীন হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। যদিও চলতি মাস থেকে আক্রান্তের হার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় পুনরায় নতুন করে চিকিৎসা প্রদানে প্রস্তুত করা হচ্ছে হাসপাতালটি। ইতোমধ্যে গেল সপ্তাহে হাসপাতালের সার্বিক বিষয় দেখভালে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। যদিও হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত নার্সসহ কর্মচারী সংকট রয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই অন্য কোন স্থান থেকে হলি ক্রিসেন্টে নার্স ও কর্মচারী পাঠানো হবে। এমন তথ্য দিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পুরোদমেই চালু রয়েছে হাসপাতালটি। শুধুমাত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট আছে। তবে তা কিছুদিনের মধ্যেই পূরণ করা হবে।’
অন্যদিকে, সিআরবি এলাকায় রেলওয়ে হাসপাতালে বর্তমানে প্রবাসীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা করা হলেও পরিস্থিতি বুঝে সেখানেও রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালটিতেও শয্যাসহ নতুন করে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
হলি ক্রিসেন্টে বসেছে ১০ আইসিইউ শয্যা : শয্যা প্রস্তুত থাকলেও এতদিন কোন ধরনের আইসিইউ সুবিধা ছিল না হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। তবে করোনার এ উর্ধ্বগতিতে হাসপাতালটিতে দশ শয্যার আইসিইউ ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট- ২ হিসেবেই পরিচালিত এ হাসপাতালে কিছুদিনের মধ্যেই আইসিইউ সুবিধা পাবেন রোগীরা। শয্যা বসানো হলেও আনুষাঙ্গিক কাজ এখনো বাকি রয়েছে। যা শীঘ্রই শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১০টি আইসিইউ শয্যা কার্যকর করা হয়েছে। যা দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া যাবে। পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু করা হবে।