এসবের মধ্যে দেশে করোনা রোগী সনাক্তের এক বছর পূর্ণ হলেও একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। করোনার প্রতিটি মূহুর্তকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ায় বন্দরে করোনা মহামারি আকার ধারণ করেনি। যার ধারাবাহিক কার্যক্রম তুলে ধরা হলোঃ
বিদেশী জাহাজ রাখা হয় ১৪ দিনের আইসোলেশনেঃ করোনায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা বিদেশী জাহাজে কর্মরতদের মাধ্যমে যাতে চট্টগ্রাম বন্দরের কেউ করোনায় আক্রান্ত না হয় সেজন্য বর্হিনোঙরে আসা জাহাজকে ১৪ দিন আউটারে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৪ দিন পর জাহাজের কারো করোনার লক্ষণ দেখা না দিলে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং করার অনুমতি পাওয়া যেত। এভাবে করোনা সংক্রামন রোধে প্রথম পদক্ষেপ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর।
সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ করোনার মহামারিতে বন্দর এলাকায় প্রতিনিয়ত শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ প্রতিনিধি, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চালকসহ অসংখ্য মানুষের আনাগোনা চলে। মানুষের এই চলাচলের মধ্যেমে যাতে করোনা সংক্রামন না হয় এজন্য বন্দর এলাকার প্রতিটি প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপন করা হয়। প্রতিটি দপ্তরে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রয়োজনীয় পোস্টার ব্যানার টাঙানো হয়।
আইসোলেশন সেন্টার ও করোনা স্যাম্পল কালেকশন বুথঃ করোনার কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকার কর্তৃক লকডাউন ঘোষণার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টেস্ট করার জন্য বন্দর সিবিএ কার্যালয়কে সেম্পল কালেশন বুথ হিসেবে চালু করে। বন্দরে কর্মকর্তদের মধ্যে যাদের করোনার লক্ষণ দেখা গেছে তাদের ওই বুথে সেম্পল নেয়া হতো। এরপর তাদের বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে আইসোলেশনে রাখা হয়।
বন্দর হাসপাতালে ৫০ শয্যার করোনা ইউনিটঃ বন্দর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনার চিকিৎসার জন্য বন্দর হাসপাতালে ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। গত ২০২০ সালের ১ জুলাই এই করোনা ইউনিটের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ৫০ শয্যার কোভিড-১৯ ইউনিটে ২৫ শয্যা আইসোলেশনের জন্য রাখা হয়। ২৫ জন রোগীকে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাও রাখা হয় যাথে থাকে ৬টি ন্যাজাল ক্যানোলা। এই করোনা ইউনিটের জন্য ১৩ জন চিকিৎসক, ৩৬ জন নার্সসহ মোট ১৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
৩ দফায় স্টোররেন্ট মওকুফঃ করোনাকালে পণ্য খালাস কার্যক্রমে ভাটা পড়লে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের জট লেগে যায়। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনারে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে প্রায় অচল অবস্থা সৃষ্টি হয় বন্দর কার্যক্রমে। তখন দফায় দফায় বন্দর স্টেক হোল্ডারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তখন পণ্য খালাস নিতে পর পর তিন দফায় কনটেইনারের স্টোররেন্ট মওকুফ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। করোনাকালে দেশীয় আমদানিকারকদের সহায়তা দিতে এবং বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
সকল পণ্য অফডক থেকে খালাসঃ করোনাকালে বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা কনটেইনারের চাপ সামাল দিতে নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। এক পর্যায়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশে ১৮টি অফডককে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব করে। আগে যেখানে অফডক থেকে ৩৮ ধরণের পণ্য খালাস হতো সেখানে সব ধরণের পণ্য খালাসের প্রস্তাব রাখা হয়। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বেসরকারি অফডকগুলোতে সব ধরণের পণ্য খালাসের অনুমোতি দেয়। এতে বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা কনটেইনার চলে যায় অফডকগুলোতে। এভাবে বন্দরের অভ্যন্তরের জায়গা খালি হওয়ায় আবার স্বাভাবিক কার্যক্রমের প্রাণ ফিরে পায় চট্টগ্রাম বন্দর।