রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:
পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার প্রাচীনতম উপজেলা বরকল। যা বৃটিশ শাসনামলে ১৯২৩ সালে এটি কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠে। উন্নয়নের জোয়ারে বয়ে যাওয়া দেশে ছিটেফোঁটাও ছোঁয়া লাগেনি রাঙ্গামাটির প্রাচীনতম উপজেলা বরকলে।
বরকলের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক কর্ণফুলী নদীটি অত্র এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।যা আবার মাত্র ৬-৭ মাস চলাচল উপযোগী থাকে। বাকি প্রায় ছয় মাস চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় উপজেলাবাসীকে। তাছাড়া প্রতি বছরের বন্যার সময় স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তাগুলো বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন।
তামাক ও জুম চাষ এখানকার প্রধান কৃষিব্যবস্থার অন্যতম কর্মক্ষেত্র। এছাড়া সেগুনসহ বিভিন্ন গাছ, বাঁশ এই উপজেলার একমাত্র ব্যবসার মাধ্যম।এছাড়া ও রয়েছে স্বল্প পরিসরে মৎস্যজীবি। যার কোনটাই স্থায়ী নয়। নেই ভালো কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা। সর্বোপরি সব না পাওয়াকে ছাঁপিয়ে গেছে সড়ক ও বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা দুটি। যার মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যাবস্থাপনায় লক্ষ্য করা গেছে চরম অনিয়ম।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিলাইছড়ি উপজেলা হয়ে জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন দেয়া হয়েছে গেল ২০১৫ সালে। ঐ বছর বরকল উপজেলার মাত্র ১ কিলোমিটার এলাকাতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং।
বিলাইছড়ি জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার মানুষ আশা করেছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে । কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘন ঘন লোড শেডিং, লো- ভোল্টেজ, ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট। দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৪-৫ ঘন্টাও থাকে না নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ।বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারার মূল কারন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনা কে দায়ী করেছেন স্বয়ং বিদ্যুৎ উন্নয়ন র্বোড (পিডিবি) কতৃপক্ষ।
ভুষনছড়া ফারুখ ই আযম দাখিল মাদ্রাশার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল হেলাল বলেন,বিদ্যুৎ না থাকায় স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া, অফিসের কাজ কর্ম ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানালেন বরকল উপজেলার বাসীন্দাগন। অন্যদিকে, ঘরের গৃহস্থালির কাজ করা যেমনি সম্ভব হয়না তেমনি ইলেকট্রনিক্স মালামাল গুলো নষ্ট হয়ে আর্থিক ভাকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারন মানুষ।
বিগত ২০১৫ সালে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বরকলে বিদ্যুৎ লাইন উদ্ভোধন করতে এসে ঘোষনা দিয়েছেলেন যে আগামী ১ বছরের মধ্যে হরিনা পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু তার সেই প্রতিশ্রুতির পর প্রায় ৬ বছর অতিবাহিত হতে চলল।কিন্তু সেই বিদ্যুৎ আজও আমাদের কাছে স্বপ্নের হরিণ হয়ে রয়ে গেছে।
বরকল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো নাছির উদ্দিন মহারাজ জানান,বরকল এমন একটি উপজেলা পর্যটনসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাবে অত্র উপজেলাটি আজও দুর্গম রয়ে গেছে।বর্তমানে অত্র উপজেলার মানুষের জন্য সব চাইতে বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকা।সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে বিষয়টি আমলে নিয়ে জনবহুল এলাকা কলাবুনিয়া,এরাবুনিয়া, ভুষনছড়া হরীনা ও ঠেগামুখ হয়ে অত্র বিদ্যুৎ লাইনটি বর্ডার এলাকা পর্যন্ত যাতে খুব শীঘ্রই বিস্তার ঘটানো যায়।
এ বিষয়ে ভুষনছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো মামুনর রশিদ মামুন মুঠো ফোনে জানান,বিগত বছরের ২৪ জুন বরকল বিদ্যুৎ গ্রাহক উন্নয়ন কমিটির উদ্যোগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল বরকল উপজেলার মানুষ। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা ও উপজেলায় সাব-ষ্টেশন করার দাবি তুলেছিল উপজেলার মানুষ। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সেই দাবির কোন গ্রাহ্য করেনি। বরং সেই দাবির পরিবর্তে আরও অতি মাত্রায় হয়রানি করা হচ্ছে।আমরা খুব শীঘ্রই এর সমাধান সহ ভুষনছড়া ও হরিনা ইউনিয়নসহ সমগ্র বরকল উপজেলাকে বিদ্যুৎ আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিগত কিছুদিন পুর্বে নতুন করে জগন্নাথছড়া পর্যন্ত টানা হয়েছে ৩ কিলো বিদ্যুৎ লাইন। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।সব মিলিয়ে ২ কিলোমিটারেও প্রবেশ করতে পারেনি উক্ত লাইনটি। জানা যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের চাঁদার দাবির মুখে কাজটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগেও একবার বরকল থেকে ভুষনছড়া অভিমুখী রাস্তা নির্মানের কাজটি এরকমই এক প্রভাবশালী সংগঠনের কারনের আজ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসিক প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান (মজিদ) বলেন, কাপ্তাই হয়ে বিলাইছড়ি উপজেলা পর্যন্ত তাঁর দেখাশুনা করার দায়িত্ব। জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন জেলা সদরের বিতরন বিভাগ দেখাশুনা করে। আবহাওয়া খারাপ হলে লাইনে সমস্যা দেখা দেয়। দুর্গমতার কারণে ইচ্ছে থাকলেও লাইন সঠিক ভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। তার পরেও অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।স্থানীয় কিছু সমস্যার কারনে নতুন লাইনটি পুরো তিন কিলোমিটার পর্যন্ত এখনো স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই উক্ত কাজটি সম্পাদন করা হবে।
এছাড়া তিনি আরো জানান,অচিরেই উক্ত লাইনটি কলাবুনিয়া, ভুষনছড়া ও হরিনা হয়ে বর্ডার এলাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।