মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ
চট্টগ্রাম বাসীর সুপেয় পানির ঘাটতি লাঘবে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেশিনারিজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চীনা ও আমেরিকার সুপারভাইজাররা চূড়ান্ত কমিশনিং করার পর এটি উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।
২০২০ সালের জুনে এটি চালু হওয়ার প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হলেও করোনার কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় এটির নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়। পরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলে কাজের গতি ফিরে আসে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে ট্রায়াল রান। চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ট্রায়াল রান শুরু হয়।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ওয়াসার এ যাবতকালের বাস্তবায়নকৃত সবচেয়ে মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের জাইকার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ চলছে। প্রকল্পের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়বে দৈনিক আরো ১৪ কোটি লিটার। বর্তমানে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। নগরীর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী উপজেলার বাসিন্দারা এ সুপেয় পানির সুবিধা ভোগ করতে পারবে বলেও কর্মকর্তারা জানান।
কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও মদুনাঘাট প্রকল্প চালুর পর মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ-২ নামের প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে এটিই হবে প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরের মধ্যে ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্প। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪ শত ৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৬ শত ২৩ কোটি ২৮ লাখ, বাংলাদেশ সরকার ৮ শত ৪৪ কোটি ৮০ লাখ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার তহবিল থেকে ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে। নগরীতে বর্তমানে ওয়াসার পানি চাহিদা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা সরবরাহ করতে পারে প্রায় ৩৬ কোটি লিটার। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ-২ চালু হলে উৎপাদন বাড়বে আরো ১৪ কোটি লিটার। তাতে নগরীর পানি সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।
কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ-২ এর পরিচালক ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এ প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেশিনারিজ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের চীনা ও আমেরিকার সুপারভাইজাররা চূড়ান্ত কমিশনিং করার পর এটি উৎপাদনে যাবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তারা এদেশে আসবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হবে। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি উৎপাদনে যাবে। এটি উৎপাদনে যাওয়ার পর নগরীর খুলশী, পতেঙ্গা, হালিশহরসহ যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ তুলনামূলক কম সেখানে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তবে কিছু কিছু জায়গাই এখনো পানি সরবরাহের গতি কম রয়েছে বলেও ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, এ প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে পানি সরবরাহে গতি আসবে।