সরওয়ার কামাল, কক্সবাজারঃ
অবশেষে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহলে গত দুইমাস ধরে চলে আসা পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বন্ধে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় মূলহোতারা পালিয়ে গেলেও দুইজন শ্রমিককে ধ্বংসস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনে ব্যবহৃত দুটি ডাম্পার গাড়ি। পুড়িয়ে এবং ভেঙে নষ্ট করা হয়েছে ভূ-গর্ভ থেকে বালু তুলতে বিভিন্নস্থানে বসানো সাতটি শক্তিশালী ড্রেজার (শ্যালোমেশিন) এবং কয়েকশত ফুট পাইপ। ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে আটক দুইজনকে একমাস করে কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারী
বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন। সাথে ছিলেন চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাইন উদ্দিন তালুকদার এবং সঙ্গীয় পুলিশ, ভূমি অফিসের একাধিক কর্মচারী এবং শ্রমিক।
একমাস করে কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রংমহল গ্রামের জসীম উদ্দিনের ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম (২৪) ও চকরিয়া পৌরসভার ভাঙারমুখের সাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. আলমগীর (৩০)।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা আবারো পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী রংমহল গ্রামের বাসিন্দারা। তারা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে চলে যাওয়ার পর আগেকার মতোই এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ডাম্পার গাড়িতে করে পাচার শুরু করা হয়েছে। বগাইছড়ি ছড়াখালে মাটি ফেলে নির্মিত রাস্তাটিও অপসারণ না হওয়ায় মাটি পরিবহন অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের পর ফের প্রভাবশালীদের অপতৎপরতা শুরু এবং পানির প্রবাহ বন্ধ করে বগাইছড়ি ছড়াখালে দেওয়া মাটির বাঁধ তথা সড়ক অপসারণ না করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চকরিয়ার এসি ল্যান্ড মো. তানভীর হোসেন বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ হচ্ছে অভিযানের সময় যাকে স্পটে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এর বাইরে অন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এজন্য যারা এই পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করবে। এর পর উদ্যোগ নেওয়া হবে ছড়া খালে দেওয়া মাটির বাঁধ অপসারণের। এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘ডুলাহাজারার রংমহলে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া হবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর আবারো অপতৎপরতা শুরু করলে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে।’
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন বলেন, ‘ডুলাহাজারার রংমহলে যারা পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাদেরকে শনাক্ত করে ক্ষতিপূরণসহ পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করতে কক্সবাজারে দায়িত্বরতদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত এনিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে চকরিয়ার ডুলাহাজারার রংমহলের দাঙ্গার বিলের টিলা শ্রেণীর পাহাড় সাবাড় ও সমতল জমির মাটি এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে প্রতিদিন শত শত গাড়িতে করে অন্যত্র পাচারসহ ভয়াবহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে ভয়াবহতার চিত্র দেখে সবার মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে প্রকাশিত সংবাদটি। এতে টনক নড়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। এর পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো।