বরকল(রাঙ্গামাটি)প্রতিনিধি:
রাঙামাটির বরকল উপজেলাতে তামাক বিক্রির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগ সম্পর্কে স্থানীয় তামাক চাষী শামীম,কামরুলসহ আরো কয়েকজন জানান তামাক বিক্রির নামে বাড়ছে চাঁদাবাজি। তারা বলেন,গতবছর মাঠপর্যায়ে কাজ করা সুপারভাইজার মো: ফারুক এবং লেবার সর্দার আবুল এরা দুইজন তামাক চাষে জড়িত চাষীদের জিম্মি করে আঞ্চলিক দল ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাদা আদায় করেছে,গতবছরের মত এবছরেও দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে, অনেক তামাক চাষী এমনটাই জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন কৃষক ছাড়াও শামীম এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানাগেছে ,চাষীদের থেকে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রেও এদের রয়েছে বিশেষ কৌশল।তারা চাদার পরিমান নির্ধারণ করে দিলেও সরাসরি টাকা নিজেরা নেয় না।তাদের হয়ে এই টাকা কালেকশন করেন লংগদু উপজেলার মাইনীঘাটের লেবার সর্দার আবুল।বরকল এলাকায় উৎপন্ন তামাক বিক্রির জন্য ট্রলার যোগে নৌপথে লংগদু উপজেলার মাইনীঘাটে লেবারদের মাধ্যমে উক্ত মাল ট্রাকে পরিবহন করে খাগড়াছড়ির কোবাখালিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নেয়া হয়।এই কোবাখালি ও বরকলের মধ্যবর্তী মাইনীঘাটেই উত্তোলন করা হয় উক্ত চাদা।
চাদা পরিশোধ না করা পর্যন্ত কোন তামাক চাষীর মাল কোন শ্রমিক আনলোড করে ট্রাকে তুলেন না।তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিটা চাষীকে উক্ত চাদা দিতেই হয়।কোন চাষী যদি প্রচলিত নিয়ম না মেনে অন্যকোন উপায় অবলম্বন করতে চায় তাহলে কোবাখালিতে পৌছার পর উক্ত চাষীর নিয়ে যাওয়া পন্য রিজেক্ট করে দেয়া হয়।আর সেই রিজেক্ট করা মাল কোম্পানি ক্রয় না করায় চাষী সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।
তারা বলেন,এই সিন্ডিকেট ইচ্ছে করেই ওখানকার কিছু কর্মচারীদের হাত করে অনেক চাষীর সম্পুর্ন মাল রিজেক্ট করায়।পরবর্তীতে সেইসব মাল চাষীরা ফেলে আসলে তারা তা পুনরায় বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।এভাবে অত্র উপজেলার অনেক চাষী ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সুপারভাইজার ফারুক মুঠোফোনে কথা বলে জানাগেছে,তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়ে অবগত নন,কে বা কারা এই কাজ করেন তিনি অবগত নন,এই অভিযোগ তিনি ভিত্তিহীন বলে জানান,অন্যদিকে শ্রমিক সর্দার আবুল জানান তারা মাইনি ঘাট থেকে তামাক আনলোড করে ট্রাক বা পরিবহনে লোড বা বোঝাই করার পারিশ্রমিক হিসেবে সর্বোচ্চ ৫৫টাকা নিয়ে থাকেন। এবং অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
এই বিষয়ে বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরকান অনুপম এলাহী জানান,তামাকচাষে সরকার কৃষকদের বারবার নিরোৎসাহী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এই চাষে পরিবেশ ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।চাঁদাবাজির বিষয়ে কৃষকদের অভিযোগ পেলে যথাযত ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
একটি জরিপে দেখা গেছে,বরকলের নিচু জমিগুলোতে চাষযোগ্য জমির ৮৫.৫৬ শতাংশ জমিই তামাকের দখলে।দিন দিন এই চাষের প্রবনতা আরো বাড়ছে।সেই সাথে উজার হচ্ছে বন।কারন তামাক পাতা পক্রিয়াজাত করার জন্য চুল্লির কাঁচামাল হিসেবে প্রতিছর কয়েক লক্ষটন কাঠ পুড়িয়ে ধ্বংস হচ্ছে এসব এলাকার বন।বরকলে বর্তমানে ভুষনছড়া ইউনিয়ন , আইমাছড়া ইউনিয়ন ও বরকল সদর ইউনিয়নের কুরকটিছড়ি ও সুবলং এর বরুনাছড়ির কিছু এলাকাতে চলছে এই তামাক চাষ।
এবিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণের দাবী তামাক চাষ ও চাদাবাজি বন্ধে প্রশাসনকে এগিয়ে আসা অতিব জরুরী।দেখা গেছে তামাকপাতা পোড়ার একমাত্র কাঁচামাল হিসেবে কাঠ বা লাকড়ি কাটার নামে বনউজাড় হচ্ছে।
অন্যদীকে সুশীল সমাজ বলছেন,বরকলে তমাক চাষের বিকল্প হিসেবে সূর্যমূখী,ধান,ভূট্টা,গম চাষ করতে কৃষকদের আগ্রহী করতে হবে।উপজেলা ও জেলা কৃষি অফিস সহযোগিতা করলে ঐ অঞ্চলের তামাক চাষের বিকল্প কৃষি উপৎপাদন বাড়বে।
রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজ দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে র ১৮(ক) ধারায় দেশের ভবিষ্যৎ ও বর্তমান নাগরিকের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় তামাক চাষ বন্ধে কার্যকর ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্রের কোনো বাধা নেই।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স কনফারেন্সে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।