২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম ইতিহাসের ঐতিহাসিক দিন। এদিনে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি পাহাড়ীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ তান্ত্রিক গোষ্ঠীর অর্থাৎ উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জনসংহতি সমিতির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং শান্তি বাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা। এরপর ধীরে ধীরে উপজাতি অদিবাসী-বাঙ্গালী সংঘর্ষ হ্রাস পায়। তবে এই চুক্তির অধিকাংশ শর্তই সরকার বাস্তবায়ন করেছেন। বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে।
পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষ থেকে
অভিযোগ করেছেন, “সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়, তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।“
বাংলাদেশে পার্বত্য চুক্তির ২৩ বছর পার হলেও তিন পার্বত্য জেলায় সংঘাত, অস্থিরতা বেড়েই চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ স্বীকার করেছেন।এই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়েই বিতর্ক এখনও থামছে না।
চুক্তি স্বাক্ষরকারী পাহাড়ীদের একটি সংগঠন জনসংহতি সমিতি অভিযোগ করছে, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিভিন্ন গোষ্ঠী নানান উদ্দেশ্য নিয়ে সক্রিয় থাকার সুযোগ পাচ্ছে এবং সেকারণে পাহাড়ে অস্থিরতা বাড়ছে।
পার্বত্য অঞ্চলে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের অনেকে বলছেন, চাঁদাবাজি এবং অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই আঞ্চলিক দল এবং গোষ্ঠীগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছে এবং সংঘাত হচ্ছে।
পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ এবং তিনটি জেলা পরিষদ গঠনকে বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সেগুলোতে দীর্ঘ দু’যুগেও কোন নির্বাচন দেওয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে কাগজে কলমে নির্বাচিতদের দিয়েই পার্বত্য জেলা পরিষদ সমুহ চলছে।
এছাড়া আঞ্চলিক পরিষদের হাতে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং সব সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা সহ চুক্তির বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ করে আসছে পাহাড়ি সংগঠনগুলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন , পার্বত্য এলাকায় উপজাতীয়দের আঞ্চলিক দলগুলো অর্থ আদাশ ও চাঁদাবাজি সহ অধিপত্য বিস্তারের লক্ষে ঝুঁকেছে। সেজন্য তাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
এমনকি চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিও বিভক্ত হয়েছে। ভাগ হয়েছে চুক্তি বিরোধী পাহাড়িদের একটি সংগঠন ইউপিডিএফ।
পার্বত্য এলাকায় নাগরিক পরিষদ নামের বাঙালীদের একটি সংগঠনের একজন নেতা এরশাদ আলী বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলোর আয়ের মূল উৎস চাঁদাবাজি। ফলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অস্ত্রের ব্যবহার এবং সংঘাত বেড়েই চলেছে। এখানে অর্থস্বার্থই এখন একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
জনসংহতি সমিতির (এন এম লারমা) নেতা সিন্ধু বিকাশ চাকমা বলেন, চুক্তির বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হওয়ায় পথে। তবে পার্বত্য ভুমি সমস্যা সমাধান না হওয়ায় সংকট কাটছে না। কয়েকদফা অবসর প্রাপ্ত বিচারপতিদের দিয়ে কমিশন প্রধান করে পাঠালেও কোন লাভ হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পুলিশ বলছে, অধিপত্য বিস্তারে গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। সে কারণে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামের সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যেও চরম উদ্বেগ রয়েছে। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে তিন পার্বত্য জেলায় সংঘাতে কমপক্ষে ১০০ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।পাহাড়িদের সংগঠন বা গোষ্ঠী গুলোর মধ্যে সংঘাত যেমন বাড়ছে, তেমনি পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ হয়েছে।
নারী উদ্দোক্তা মরিয়ম আক্তার বলেন, উপজাতীয় আঞ্চলিক দলগুলোর হত্যা,লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি থেকে উপজাতি – বাঙ্গালী কেহই রেহাই পায় না। শান্তি চুক্তির আগে একটি দলকে চাঁদা দিতে হতো এখন তা চারগুন, মানে চারটি গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়। সরকার খুবই আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার সাথে চুক্তি করেছেন। এবং চুক্তি বাস্তবায়নে ৮০% এগিয়ে। আমরা পার্বত্যবাসীরা শান্তিচুক্তির শান্তি চাই।