নিজস্ব প্রতিবেদক:- বাংলাদেশে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা, বিশ্বসমাদৃত ত্বরিকা-ই-মাইজভাণ্ডারীয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক)-এর ৩৫তম উরস্ শরিফের আনুষ্ঠানিকতা ১১ অক্টোবর বুধবার মাইজভাণ্ডার শরিফ ‘দরবার-ই গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী’র গাউসিয়া হক মন্জিলে মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়েছে।
দেশ-বিদেশের হাজার হাজার আশেক-ভক্ত অনুরক্তের আগমনে গাউসিয়া হক মন্জিলসহ পুরো মাইজভাণ্ডার শরিফ এলাকা আল্লাহু আল্লাহু যিকিরের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। এ উপলক্ষে তাঁর রওজা শরিফকে ঘিরে ভক্ত জনতা দোয়া, দুরূদ, মিলাদ, কিয়াম ও জিকির আজকারে মশগুল থাকেন। এ মহান অলির উসিলায় নিজেদের হাজত মকসুদ পূরণ ও আল্লাহ্ পাকের নৈকট্য অর্জনের অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানান ভক্ত জনতা। রাত ১০টায় কেন্দ্রিয় আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলে সভাপতিত্ব এবং আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী’র প্র-প্রপৌত্র, গাউসিয়া হক মন্জিলের সাজ্জাদানশীন, আওলাদে রাসূল হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.) প্যালেস্টাইনে আক্রান্ত শিশুসহ সকল মানব সন্তানের মুক্তি এবং জালেমদের হেদায়েত কামনা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে যারা ডেঙ্গু ও কোভিড এ আক্রান্ত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের নাজাতের জন্য দোয়া করেন। মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটির প্রতিটি সদস্য যাতে দেশ-জাতি, মাজহাব-মিল্লাত ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারে সে জন্য তাওফিক কামনা করেন মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে। বিগত সময়ে গাউসিয়া হক কমিটির যে সকল মুরুব্বি ইন্তিকাল করেছেন তাদের মাগফিরাত কামনা করেন।
উম্মুল আশেকীন মুনাওয়ারা বেগম এতিমখানা ও হেফযখানা’র সুপার মাওলানা মোহাম্মদ আনওয়ার হোসাইনের সঞ্চালনায় মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন যথাক্রমে ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর শিক্ষা’ বিষয়ে মাদরাসায়ে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, ‘প্রসঙ্গ: নারী সুফি’ বিষয়ে মাদরাসায়ে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর আরবি প্রভাষক মাওলানা মুহাম্মদ মুজিবুল হক, ‘শানে অছিয়ে গাউসুল আযম হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী’ বিষয়ে মাওলানা কাজী মুহাম্মদ হাবীবুল হোসাইন, ‘তাসাওউফের ইতিসাসের আলোকে বেলায়তে মোতলাকা কিতাবের মূল্যায়ন’ বিষয়ে চরণদ্বীপ দরবার শরিফের নায়েবে সাজ্জাদানশীন শাহজাদা শেখ সাইফুল্লাহ্ ফারুকী চরণদ্বীপি, ‘পবিত্র কোরআনের শিক্ষা এবং বিশ^অলি শাহানশাহ্ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী’ বিষয়ে গোমদণ্ডী দরবারের শাহজাদা মাওলানা সৈয়দ আহমদুল হক।
উরস শরিফ উপলক্ষে ‘শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট’এর গৃহীত ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদেশমূলক দিক-নির্দেশনা সম্বলিত প্রচার, নগরের মুরাদপুর হতে দরবার শরিফ গেইট পর্যন্ত বিটিআরটিসি’র দিনব্যাপী বাস সার্ভিস, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল। আশেক-ভক্ত-জায়েরীনের সরব উপস্থিতি শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্যে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের দল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য যুব রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসাসেবা দল দায়িত্ব পালন করেছেন। ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় হযরত কেবলার রওজা শরিফ মাঠ হতে শান-ই আহমদিয়া গেইট পর্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রাস্টের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে।
মাহফিলের সভাপতি তাঁর বক্তব্যে সফলভাবে উরস শরিফ সম্পন্ন করতে সকল পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবক, জেলা প্রশাসন, আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, যুব রেড ক্রিসেন্ট, বিআরটিসি, উপজেলা প্রশাসন, পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ, ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী থানা প্রশাসন সহ সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্যে ধন্যবাদ জানান। আখেরি মোনাজাতে হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী দেশ-জাতি ও বিশ্ববাসীর কল্যাণ কামনা করেন এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমত কামনা করেন।