ঘাগড়ায় ৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩ গ্রামবাসীর প্রধান সড়কটি খানাখন্ডে ভরা।। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ
নিউটন চাকমা, কাউখালী (রাঙামাটি) প্রতিনিধিঃ
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন ৩নং ঘাগড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাগড়া (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাগড়া কলেজ সহ মহাজন পাড়া, স্কুলছড়া ও চৌধুরী পাড়া ৩টি গ্রাম নিয়ে অবস্থিত। এই তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তিন গ্রামবাসীদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম এই প্রধান সড়কটি। এই রাস্তায় দৈনিক কয়েকশবার গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। বর্তমানে রাস্তাটি চারপাশে খানাখন্ডে ভরপুর ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যাহবাহনের পিছনে ধাক্কা না দিলে কোন অবস্থায় উঠানামা ও যাতায়াত করা মোটেই সম্ভব নয়।
এই ব্যাপারে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চন্দ্রা দেওয়ানের সঙ্গে কথা হলে জানান, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের পার্শ্বে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাগড়া কলেজ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সহ আরো ৩টি পাড়া অবস্থিত। এই সড়কটি একমাত্র স্কুল-কলেজ ও পাড়ার ভিতরে চলাচলের প্রধান মাধ্যম। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি খানাখন্ডের গর্তের সৃষ্টি হয় ও টানা প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তার মাটি সরে ভেঙ্গে গেছে। এভাবে দীর্ঘ ১৫টি বছর অতিবাহিত হলেও সড়কটি মেরামত বা সংস্কারের উদ্যোগ কেউ নেয়নি। এই রাস্তাটি যানবাহন চলাচল, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীরা যাতায়াতকারী একমাত্র উপায়। যদিও বিকল্প রাস্তা থাকলেও সেই রাস্তাটি বেশি উচ্চতার কারনে যাতায়াত কম। দীর্ঘ ১৫ বছরে রাস্তাটি সংস্কার না করার কারনে এই বেহাল দুর্দশায় জর্জরিত। অবিলম্বে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের মনিকা, আনাই, আনুচিং, রিতুপূর্ণা ও এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমাদের প্রধান কারিগর ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি। বর্তমানে মনিকা, আনাই, রিতুপূর্ণা ও রূপনাদের ন্যায় উত্তরসুরি হিসেবে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়টিতে আরো ৩০ জনের মতো একটি মহিলা ফুটবল টিমকে জাতীয় পর্যায়ে নিতে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়টি খেলায় যেমন পারদর্শী, তেমনি বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও পারদর্শী। কিন্তু তিনি আবেগ কন্ঠে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা্ চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, বিগত ২০১৭ সালে পুরো রাঙামাটিতে টানা মুষলধারে বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যায় কাউখালী, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু সহ কয়েকটি এলাকায় ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তৎকালীন ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষনরত মহিলা ফুটবল টিমের আবাসিক ভবনের পূর্ব পার্শ্বের সীমানা প্রাচীরের মাটি সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমেই সামান্য বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢলের পানিতে মহিলা ফুটবল টিমের আবাসিক ভবন ও বিদ্যালয়ের মাঠটি পানিতে ডুবে যায়। তজ্জন্য অনতিবিলম্বে প্রশিক্ষনরত মহিলা ফুটবল টিমের আবাসিক ভবনের সীমানা প্রাচীরটি রক্ষার্থে স্থায়ী সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৭ সালে মুষলধারে টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে বিদ্যালয়ের উত্তরপার্শ্বে একটি শ্রেণী কক্ষের কর্ণারের দেওয়াল অর্ধেকাংশ ভেঙ্গে যায়। দীর্ঘ ৬ বছরেও এই শ্রেণী কক্ষটি সরকারের আর্থিক অনুদানের অভাবে সংস্কার ও মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পূর্ণধন চাকমা বলেন, একটি প্রাথমিক, একটি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক সহ ৩ গ্রামবাসীর যোগাযোগ মাধ্যম এই রাস্তাটি। দীর্ঘ ১৫টি বছর অতিবাহিত হলেও রাস্তাটি সংস্কারের আশার আলো মুখ দেখেনি। অথচ এই রাস্তা দিয়ে এমপি, মন্ত্রী ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসেছেন। কিন্তু কারোর সুনজরে আসেনি। যদিও রাস্তাটি তৎকালীন ১৫/২০ বছর আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলজিইডি রাঙামাটি অফিস বাস্তবায়নে দায়িত্বে ছিলেন। আশা করছি এলজিইডি রাঙামাটি ও কাউখালী অফিস যৌথভাবে প্রকল্প হাতে নিলে শীঘ্রই রাস্তাটি সংস্কার করা সম্বব। এলাকাবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রাস্তাটি শীঘ্রই মেরামতের অনুরোধ জানান।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঘেঁষে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাগড়া কলেজ ও ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৩ গ্রামের এলাকাবাসীদের মুল চলাচলের রাস্তাটি বিগত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির পানিতে মাটি সরে গর্তের সৃষ্টি, খানাখন্ডে ভরা, ভারী যানবাহন চলাচল ইত্যাদির কারনে রাস্তার বেহাল অবস্থা। সুদীর্ঘকাল ১৫ বছর ধরে সংস্কারের কাজ কিংবা মেরামতের লক্ষ্য করা যায়নি। সেজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে রাস্তাটি নতুনভাবে সম্প্রসারিত করে উদ্যোগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জোর দাবি জানিয়েছেন।