হাবীবুল্লাহ মেসবাহ,রাজস্থলী প্রতিনিধিঃ
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতায় দুইদিন পর অপহৃত তিন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পুলিশ ও কাপ্তাই জোনের সেনাবাহিনী গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজস্থলী উপজেলাধীন ২নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের লংগদু পাড়া নামক এলাকায় থেকে অপহৃত শ্রমিক সোহাগ(২০) রূপক(১৮) ও বিশ্বজিৎ দে (২২) কে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ৩ জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছেন বলে জানা রাজস্থলী থানা পুলিশ। ইসলামপুর এলাকার সিএনজি চালক মোঃ আবু শহীদ বলেন, বুধবার আমি সন্ধ্যা ৭ টার পর রাজস্থলী থেকে ইসলামপুর এলাকায় আশার পথে লংগদু পূনর্বাসন এলাকায় পাহাড় উঠার সময় প্রথম একজন গাড়ি দাঁড়াতে বললে গাড়ি দাড় করাই। পরে আরো দুই জন ভিতর থেকে বের হয়ে তিনজন লোকের গলায় ছিকল বাঁধা অবস্থায় আমার সিএনজিতে উঠে। তাদেরকে ইসলামপুর আনসার ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে এনে নামিয়ে দিয়েছি।
জিজ্ঞাসাবাদে অপহৃত শ্রমিক সোহাগ, রূপক ও বিশ্বজিৎ দে বলে, একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমাদের গত সোমবার দিবাগত রাতে তুলে নিয়ে যায়। আমাদেরকে পাহাড়ের বিভিন্ন চিপা ও টিলায় নিয়ে গিয়ে একটি ঘরের ভিতরে রাখেন। পরে আমাদেরকে গাছের সাথে বেঁধে রাখলে গাছ ভেঙ্গে আমরা পালিয়ে চলে আসি।
সোহাগ ও রূপকের বড় ভাই সবুজ জানায়, অপহৃত তিনজনই সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে বেসরকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিই”র বাস্তবায়নাধীন সড়ক ধারক দেয়াল নির্মাণ কাজের শ্রমিক ছিলেন। সবুজ আরো জানায়, বিগত তিনমাস ধরেই তারা সর্বমোট ১৪ জন শ্রমিক রাজস্থলী-বাঙ্গালহালিয়া সড়কের লংগদু পাড়াস্থ লেবার শেডে অবস্থান করে পাশের সড়কে এনডিই কর্তৃক ধারক দেয়াল নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার সন্ধ্যায়ও কাজ শেষ করে লংগদু পাড়াস্থ লেবার শেডে অবস্থান করছিলো উক্ত তিন শ্রমিক। এসময় অন্যান্য শ্রমিকরা একটু দূরে চায়ের দোকানে গিয়েছিলো নাস্তা করার জন্য। এসময় ৫/৬ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী খুঁটি থেকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে লেবার শেডে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে তিনজনকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যায়।
সবুজ আরো জানান, আমার ভাইদের নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের লেবার শেডের পাশেই আরো একটি লেবার শেডে অবস্থান করা আরো দুইজন শ্রমিককে ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। তারা দৌড়ে ইসলামপুর বাজারে এসে আমাদেরকে ঘটনাটি জানায়। আমি আমার ভাইকে মোবাইলে কল দিলে প্রথমবার সে রিসিভ করে কিছু না বলে সংযোগ চালু রাখলে আমি নিজেও অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের কন্ঠ শুনতে পাই।
তারা আমার ভাইকে বলছে, তোমাদের অন্য শ্রমিকরা কোথায় গেছে? সকলেই দোকানে গেছে এমনটি জানানোর পর অপহরণকারিরা আমার ভাইকে বলে তাহলে তোমরা আমাদের সাথে চলো। এরপর থেকে আমি বেশ কয়েকবার আমার ভাইয়ের মোবাইলে কল দিলে রিং হলেও কেউই রিসিভ করে নাই। এক পর্যায়ে ভাইয়ের মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান সবুজ। তারা তিন ভাই একসাথেই উক্ত কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা নেত্রকোনা জেলাধীন পূর্বধলা থানার সাতকাঠি গ্রামের জামাল উদ্দিনের সন্তান। এছাড়া অপহৃত অপরজন বিশ্বজিৎ দে’র বাড়ি গাইবান্ধা জেলাধীন সাগাটা থানার ২নং ধলধলিয়া গ্রামে। এদিকে কাপ্তাই জোনের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর তৎপরতা সহপাটিদের ফেরৎ পেয়ে খুশি নির্মাণাধীন কাজের টিকাদার ও তাদের পরিবার। এদিকে রাজস্থলী থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, নিখোঁজ তিন জনের মধ্য থেকে বিশ্বজিৎ দে’র (২২) ব্যবহারিত মোবাইল নাম্বারটি দিয়ে ঠিকাদারদের নিকট থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। মোবাইলটিকে গুগল ট্রেকিং করে দেখা যায় তাদের লোকসান চট্রগ্রামে। এবং তার মোবাইলটি অন্য জনে ব্যবহার করছে।
বুধবার সন্ধ্যায় তাদেরকে লংগদু পূনর্বাসন এলাকা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান। পরে অনেকটা যাচাই-বাছাই করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট কাজের টিকাদারের প্রতিনিধিদের হাতে তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।