চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, ‘অষ্টম শ্রেণি থেকে রাজনীতি করছি। সত্তরের নির্বাচনে তিন পোলের মাথায় দেশবাংলা হোটেলে দুইটা নানরুটি আর এক বাটি ডাল খেয়ে ঘোড়ার গাড়িতে পাবলিসিটি করেছি। স্থানীয়-জাতীয় নির্বাচন যাই হোক মনোনয়ন না পেয়েও কোনোদিন ঘরে বসে থাকিনি। অভিমান করে বসে থাকিনি। পলিটিক্স, নির্বাচন চলমান প্রক্রিয়া। হয়তো আজ পাইনি, আগামীতে পাব।’
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে করোনামুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। তবে কি পাবেন সেটি স্পষ্ট করেন নি। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও করোনাকালীন সময়ে ৬ মাসের জন্য কপাল খুলে তার। নিয়োগ পান চসিক প্রশাসক হিসেবে। হয়তো আগামীতে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এ কথা বলেছেন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ত্যাগী হিসেবে পরিচিত এ নেতা।
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিতে না পারার আক্ষেপ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার আমার জীবনের কঠিন সময়। এবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছি না। যেহেতু আমার একটি দায়িত্ব আছে। আমার ভেতরে যে কষ্ট, খাঁচার পাখির মতো বন্দিশালায় আছি। সবাই মিছিল করছে, মিটিং করছে আমি দেখছি। আমি আগে কত স্লোগান দিয়েছি। প্রজন্মের প্রথম ভোট নৌকা দিয়ে শুরু হোক। ক্রিয়েটিভিটি কমে গেছে। আমার ভেতরের ছটফটানি কাউকে দেখাতে পারছি না।
জনগণকে বুঝে শুনে ভোট দেয়ার প্রস্তাব জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের দল। যোগ্য প্রার্থীকে নমিনেশন দিয়েছে। বিএনপি তাদের সভাপতিকে প্রার্থী করেছে। ইসলামিক ফ্রন্টসহ অন্যান্য দলও প্রার্থী দিয়েছে। বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী দিয়েছেন আমরা তাকেই চিন্তায় আনব। এটা এই জন্য যে চট্টগ্রামের স্বার্থে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির যেটা সুবিধা হচ্ছে সেটা হচ্ছে- এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে, অনেক দিন তারা রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
রাজনৈতিক সহিংসতা এড়ানোর প্রস্তাব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসলে উত্তাপ থাকে। এ উত্তাপ যেন আত্মঘাতী না হয়। এ উত্তাপ যেন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতিকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করে। ইচ্ছে করলে মিছিল মিটিং ছাড়াও নির্বাচন করা যায়। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। ফেসবুকে ম্যাসেজ পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি, যতটুকু হয়ে গেছে, গেছে। আর যেন কোথাও কোনো সহিংসতা না হয়। সবাই প্রশাসনকে সাহায্য করুন। নির্বাচনের পর সবাই যেন একসঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে কাজ করতে পারি।
চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এ চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যোগাযোগ কেন্দ্র। এটা উপলব্ধি করতে পেরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরি করছেন। মাতারবাড়িতে সমুদ্রবন্দর হয়ে গেছে। সেখানে আলাদা জগত গড়ে উঠেছে। মিরসরাই স্পেশাল ইকোনমিক জোনে সারা পৃথিবীর ইনভেস্টররা ছুটে আসছেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম নির্বাচনী ইশতেহারে ২৮ দফার অন্যতম ছিল- পতেঙ্গা থেকে ফেনী হাইওয়ে পর্যন্ত বাইপাস করা। মহিউদ্দিন চৌধুরী আজ বেঁচে নেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন নেত্রী। একের পর এক এক্সপ্রেস ওয়ে হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ হচ্ছে।