মো. রবিউল হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি):- স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সুবিধাবঞ্চিত থাকা খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদে বসবাসরত সাঁওতাল জনগোষ্ঠী পেয়েছে নাগরিক সুবিধা। গেলো বছরের শেষের দিকে সুবিধাবঞ্চিত এই সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর দুরবস্থা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসলে সরেজমিনে সাঁওতাল পল্লীতে ছুটে যান উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপরই পাল্টাতে শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর জীবন-মান।
নীল চাষকে ঘিরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পরাজিত সাঁওতালের একটি ক্ষুদ্র অংশ উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদ দূর্গম দাইজ্জ্যা পাড়ায় লোকচক্ষুর আড়াঁলে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। এছাড়াও বেদে, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্টি ও হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুবিধা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এতে করে প্রায় ৭ দশকের লাঞ্ছিত-বঞ্ছিতের শিকারে থাকা সাঁওতালরা এখন খুশিতে আত্মহারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমহীন, গৃহহীন পরিবারে ২শতক ভূমি ও সেমিপাকা ঘর বানিয়ে দুস্থ, অসহায় মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করছেন। এরই অংশ হিসেবে উপজেলায় ইতোমধ্যে ১ম ও ২য় পর্যায়ে ৬৭২ পরিবার ও ৩য় পর্যায়ে ৫০টি ঘর নির্মাণে সুবিধাবঞ্চিত সাঁওতাল, প্রতিবন্ধী, বিধবা, ভবঘুরে, অভিভাবকহীন ও ভিটেমাটি হারা মানুষজনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে পিছিয়ে থাকা জনপদ ও জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারা এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহারে সম্পৃক্ত করায় বিষয়টি জনমনে প্রসংশিত হয়েছে।
শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, রঙ্গিন টিন আর সারি সারি আধাপাকা ঘরে সুসজ্জিত পল্লীটি।অনেকটাই আনন্দে আর সাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করছে সাঁওতালরা। গেলো বছরও খোলা পায়খানা ব্যবহার আর কূয়ার পানি পান করেছে সাঁওতালরা, তবে এখন নিরাপদ স্যানিটেশন আর সুপেয় পানি পান করছে তারা। পাড়ার প্রতিটি পরিবারকে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। পূর্বের চেয়ে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করছে তারা।
উচ্ছ্বসিত সাঁওতাল নারী শুভ রাণী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা আগে ছাদহীন জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করতাম, খাল হতে কূয়ার পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতাম কিন্তু বর্তমানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি গভীর নলকূপের পানি পান করি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করি। তিনি আরও বলেন, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও গর্ভকালীন নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সাঁওতাল পাড়ার প্রধান ও প্রবীণ ব্যক্তি ভট্টো সাঁওতাল বলেন, স্বাধীনতার আগ থেকে আমরা এই এলাকায় বসবাস করে আসছি কিন্তু কখনো সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। এই প্রথম আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও মাথা গোঁজার ঠাই (ঘর) পেয়েছি। তবে আমাদের যাতায়াতের রাস্তাটা খুবই বেহাল, এটি সংস্কার করা হলে আমাদের জন্য অনেক বড় উপকার হতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী বলেন, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক অসহায়, দুঃস্থ ও অভিভাবকহীন পরিবারের মধ্যে উপজেলার প্রাচীন জনগোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবার ও বেদে সম্প্রদায়সহ দূর্বিসহ জীবন-যাপনকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারী সুবিধা পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। তৃতীয় পর্যায়ে সাঁলতালপল্লিতে ৮ পরিবারসহ চার ইউনিয়নে ৫০ পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে আশ্রয়ণ সুবিধায় আনা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাহসী উদ্যোগ ও অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার ফসল এই ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটি বিশ্বে নজর কেড়েছে। আমরা যেন বলতে পারি উপজেলায় একজন মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন নেই।