নির্দিষ্ট কোনো এলাকার নয়, সারা চট্টগ্রামের সেবক হতে চান নবনির্বাচিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জননেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি সেবা করবো ৯১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নত, সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম গড়তে সকলকে নিয়ে একসাথে নিয়ে উন্নয়ন কাজ করবো।
আজ বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষিত ১২ দফা আমি বাস্তবায়ন করবো।
চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘গ্রাম হবে শহর’ বাস্তবায়নের যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক শাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট—চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুণ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দা রাজিয়া মোস্তফা, বৌদ্ধ সমিতি (যুব) এর সভাপতি কর আইনজীবী জয়শান্ত বিকাশ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, রাউজানের সাবেক মেয়র দেবাশীষ পালিত, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ—দফতর সম্পাদক বিজয় বড়ুয়া, পূজা উদযাপন পরিষদেও সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন, নবনির্বাচিত সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতি, দিলোয়ারা ইউসুফ, দেবব্রত দাশ দেবু, আ ম ম দিলশাদ, নুরুল মোস্তফা সিকদার সংগ্রাম ও আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ।
এটিএম পেয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, আমি আমার এ বিজয় উৎসর্গ করলাম সমগ্র চট্টগ্রামবাসীকে। এ বিজয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চট্টগ্রামের রোডম্যাপ তৈরি করে সরকার থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ করে সিটি কর্পোরেশন ও সকল উপজেলায় সমভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করবো। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সম্পত্তি সমূহ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করবো। রেমিট্যান্স যোদ্ধাখ্যাত প্রবাসীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও তাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কারিগরি, প্রযুক্তিগত শিক্ষাসহ সাধারণ শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করবো। কৃষি অর্থনীতির ভিত শক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। কৃষি নির্ভর শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করা হবে।
মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে মাদক সন্ত্রাসের কালো থাবা থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত রাখার প্রাণপন চেষ্টা করা হবে। অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে তরুণ ছেলেমেয়েদের ক্রীড়ামুখী করতে ইনডোর ও আউটডোর গেম চালুসহ খেলার মাঠ সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বলেন, স্কুলবেলায় জাতির পিতার আদর্শের রাজনীতিতে জড়িত হয়েছিলাম মানবসেবার ব্রত নিয়ে। আল্লাহর অশেষ রহমতে মানুষের সেবার যে সুযোগ পেয়েছি তা প্রতিমুহূর্তে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাবো। উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি করে পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবো চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে। যার মধ্য দিয়ে এই জেলা পরিষদ হবে উন্নয়নের রোল মডেল।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় প্রসঙ্গে এটিএম পেয়ারুল বলেন, ফটিকছড়ি সংসদীয় আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী ছিলাম। ভেতরে বাইরের নানামুখী ষড়যন্ত্র নির্বাচনে আমাকে হারায়। সে নির্বাচনে আমার এলাকায় ১১ হাজার যদি ‘না ভোট’ না পড়ত তাহলে আমিই জিততাম।
ষড়যন্ত্র, জীবন নাশের হুমকি সত্ত্বেও আপোষহীন, সাহসী, দৃঢ়চেতা, সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন পেয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, সততার সাথে রাজনীতিকে ইবাদত হিসেবে মেনে এসেছি। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করাকে পুণ্যের কাজ হিসেবে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, জীবনে জাতির পিতার আদর্শ থেকে কোনো হুমকি, লোভ—লালসা আমাকে বিচ্যুত করতে পারেনি। নাজিরহাট কলেজ ছাত্রসংদের ভিপি থাকা অবস্থায় সামরিক শাসক জিয়া তার জনসভায় বক্তব্য দিয়ে ছাত্রদলে যোগ দেয়ার অফার দেয়। ছাত্রদল করার প্রস্তাব নিয়ে তৎকালীন এসডিও দাউদুজ্জামানকে আমাদের বাড়িতে পাঠায়। এরশাদ তার দলের ছাত্রসংগঠন করার অফার দেয়। এসব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করায় উভয় সামরিক স্বৈরশাসকের রোষানলে পড়ে আমাকে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পেয়ারুল ইসলাম আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা। দল তাকে মূল্যায়ন করেছে। আশাকরি তিনি মূল্যায়নের প্রতিদান দেবেন তার কাজের মধ্য দিয়ে।
সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থী পেয়ারুল ইসলামকে এই অঞ্চলের ৯৮ ভাগেরও বেশি জনপ্রতিনিধি মূল্যায়ন করে তারা প্রমাণ করেছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম বলেন, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম যোগ্য ব্যক্তি। তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মাধ্যমে উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী কাজ করতে সক্ষম হবেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মফিজুর বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে, নির্যাতন, কারাবরণ, হামলা, মামলা সহ্য করে আজকের পর্যায়ে এসেছেন এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। তাঁর এ বিজয়ে চট্টগ্রামের সকল ত্যাগী নেতাকর্মীর বিজয়। তিনি নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করায় নির্বাচন সম্পৃক্ত প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ।