উথোয়াইচিং মারমা;বান্দরবানঃ
পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত পাহাড়িদের আদি পেশা জুমচাষ। আধুনিক কৃষিজ সরঞ্জাজামাদি ছাড়া শত শত বছর সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আসছে জুমিয়ারা।
বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারী মাস থেকেই স্থান নির্ধারন করে শুরু হয় জুম কাটা ও আগুন দেয়া। এরপর বর্ষার শুরুতে জুমে বীজ বপনের ধুম লেগে যায়।পাহাড়ের একই জমিতে কলা, ভুট্টা, বরবটি, মারফা,আদা,হলুদ, মরিচ,তিল,তুলাসহ প্রায় ১৫/২০ ধরনের বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ হয়। এভাবেই জুমিয়াদের পুরো বছরে খাদ্যের চাহিদার পাশাপাশি অর্থের যোগান পেয়ে থাকে জুমচাষের মাধ্যমে। তবে এবছর অনাবৃষ্টি , বৈরি আবহওয়া ফলে জুমে ফলন আশানুরুপ না হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে জুম চাষিদের।
কৃষি বিভাগের তথ্যনুযায়ী জানা যায়, পার্বত্য বান্দরবানের রুমা,থানছি,রোয়াংছড়ি আলিকদম ও লামা উপজেলায় প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ জুম চাষের উপর নির্ভরশীলএবছরও পাহাড়ে ৮ হাজার ২শত ৯২ হেক্টর জুমের আবাদ হয়েছে।
শঙ্কিত জুম চাষীরা জানান, এ বছর অনাবৃষ্টি , বৈরি আবহওয়া কারণে জুমের ফলন বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।সারা বছরের জন্য জোগাড় করা খাবার সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমাদের সামনের দিনাতিপাত কিভাবে চলবে।কিভাবে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাড় হবে।এ বছর পাহাড়ের জুমিয়াদের খাদ্য সংকটে ভুগতে হবে।
থানছির সাথুই জানান, আমার জুমে দুই কানি ধান লাগিয়েছিলাম, বৃষ্টি না পরার কারণে জুমের ধানগুলো সব শুকিয়ে মারা গেছে।খুব কষ্টে ও দুষ্চিন্তায় পড়ে গেছি।
থানছির সীমান্তর্তী বড় মদক এলাকার মেমং মারমা নামে অপর আরেক জুম চাষী জানান, থানছি থেকে বড় মদক বোটে করে এক বস্তা চাউল নিয়ে যেতে ভাড়া গুনতে হয় ৭০০ টাকা করে। যা একজন মানুষের সমান ভাড়া।এখন জুমের ফলন নষ্ট হয়ে আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।এ অবস্থায় সামনে বছরের খাবার নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেছি।
রোয়ংছড়ির আলেক্ষ্যং এলাকার মেনতি তঞ্চগ্যা জানান, কষ্ট করে জুমে ধান চাষ করেছি।কিন্তু বেশি রোদ দেয়ার কারণে ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে জুমের ধানে সাদা সাদা করে কি একটা রোগ ধরলো , সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।এখন চিন্তা করে কূল পাচ্ছিনা কিভাবে সারা বছরের খাবার যোগাড় করবো। কিভাবে খাবো , কিভাবে চলবো।
এ বিষয়ে সড়ক যোগাযোগ বিহীন রুমা, থানছি ও আলীকদমসহ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জুমিয়ার পাশাপাশি শঙ্কিত জনপ্রতিনিধিরাও।
রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুই সুই থুই জানান, থানছি উপজেলা বান্দরবানের সবচেয়ে দূর্গম উপজেলা। এখানকার বেশিরভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা জুম চাষের উপর নির্ভরশীল।এ বছরে অনাবৃষ্টির কারণে আমাদের এই এলাকায় জুম চাষে ক্ষতি হয়েছে।তিন্দু, রেমাক্রি, ছোট মদক, বড় মদক, লিক্রি ও বুলু পাড়া পর্যন্ত এলাকার মানুষগুলোর দূর্ভোগ দেখা দেয়ার শন্কা রয়েছে।
বান্দরবান সদরের জামছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্যসিংশৈ জানান, পার্বত্য বান্দরবানে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে অনাবৃষ্টি ও খড়ার কারণে জুমের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে।যার কারণে জুম চাষীরা আগামী এক বছর কিভাবে চলবে এ নিয়ে খু্বই শন্কায় আছেন।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর জুমে স্থানীয় জাত ৮হাজার ২৯২ হেক্টর আবাদ হয়েছে। অনাবৃষ্টি ও খড়ার কারনে অনেক এলাকার জুম লালচে হয়ে গেছে। তারপরও কিছু কিছু এলাকায় জুমের ভালো ফলন লক্ষ্য করা গেছে।বৃষ্টি হলে জুমের ফলন ভাল হতো
তিনি আরো জানান, এবারে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৫৫ মিলি মিটার। এই সময়ে বিগত বছরের ছিল ৩২৫.৫ মিলি মিটার যা গতবছরের তুহনায় ৫গুণ কম। এর ফলে জুমের ধানের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের ফলনও ব্যাপক ক্ষতির মুখে।যার ফলে খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন জুমিয়ারা।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি জানান,এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হওয়ায় জুমের আশানুরুপ ফলন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই সরকার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে যে যদি জুমের ফলন কম হয়, তাহলে জুমিয়ারা যাতে খাদ্য সহায়তা পাই সে ব্যবস্থা করা আছে। আমাদের সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ আছেন। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে আমরা খাদ্য পৌঁছিয়ে দিতে পারবো।সরকারের সেই সক্ষমতা আছে।