সরওয়ার কামাল, মহেশখালীঃ
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকে গ্রাম্য পশু চিকিৎসক আব্দু শুক্কুর হত্যার ঘটনায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের বড় ছেলে নুরুল আবছার বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় এ মামলাটি করেছেন। এ ঘটনায় সন্দেহ জনক হিসেবে আটক করা লোকজন কে ১৫৪ ধারা মোতাবেক আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলায় আরো ৬-৭ জন কে অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়েছে । এদিকে এমন খুনের ঘটনা গুলো ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতগুলোর নিস্ক্রিয়তা ও শালিসকারক নামের এক শ্রেণির দালালের কারণে ঘটছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ-সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক বলেছেন- এলাকার আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে গ্রাম্য শালিশকারদের ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। মহেশখালীতে জমি বিরোধের জের ধরে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার কালারমারছড়া ও হোয়ানক ইউনিয়নের সীমানা এলাকার কালারমারছড়া অংশের মিজ্জিরপাড়া ছড়ারলামা নামক স্থানে গ্রাম্য পশু চিকিৎসক আব্দুস শুক্কুর নামের ৬০ বছর বয়সি এই ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষের লোকজন খুন করে। এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা সড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহজনক ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ৷ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন- ঘটনার সাথে জড়িত সব ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা হবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নিহত ওই ব্যক্তি হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গ্রাম পর্যায়ের একজন পশু চিকিৎসক।
ঘটনার পর নিহতের বড় সন্তান নুরুল আবছার জানান- তাদের এক খণ্ড জমির উপর প্রতিপক্ষের লোকজন আগের দিন রাতে পানের বরজ করার জন্য কাঠমো নির্মাণ করার খবর পায় তার পিতা। শুক্রবার সকালে তিনি একা প্রধান সড়কের ডেইল্যাঘোনা এলাকা থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে ছড়ারলামা নামক ওই স্থানে বিষয়টি দেখতে যান। এ সময় ওই স্থানে আগে থেকে অবস্থান করা জনৈক মোর্শেদ, মকছুদ, জয়নালসহ ১০-১২ জন ব্যক্তি পূর্বপরিকল্পিতভাবে লোহার রড, হাতুড়ি ও দা নিয়ে তার পিতার উপর হামলা করে। এ সময় তিনি তাদের বার বার বুঝিয়েও নিবৃত করতে পারেনি। এক পর্যায়ে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়। এদিকে ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঘটনাস্থলের কাছে প্রধান সড়কের ডেইল্ল্যাঘোনা এলাকায় অস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। পরে দ্রুত মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) প্রণব চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় পুলিশ তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অন্ততঃ ৪ জন কে আটক করতে সক্ষম হন। আটককৃতরা হলেন- মোরশেদ আলম, মকসুদ আলম, আবুল কাশেম ও আব্দুল মান্নান
পরে শেষ সন্ধ্যায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি জানান- এমন ঘটনায় পুলিশ জিরো ট্রলারেন্স নীতিতে অবস্থান করবে। অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নাই। ঘটনার পরপরই পুলিশ এসে অভিযান শুরু করেছে, খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। পুলিশ পরিপূর্ণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে বলে জানান তিনি। এদিকে ৩রা সেপ্টেম্বর রাত ২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) প্রণব কুমার চৌধুরী জানান, এ খুনের ঘটনায় নিহতের বড় সন্তান নুরুল আবছার বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মোরশেদ আলম কে। মামলায় আরও ৬-৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। ওসি জানান- পুলিশ ইতোমধ্যে এজাহারে ৪ আসামী কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। থানায় বাদী-সংবাদদাতার লিখিত এজাহার আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় তাদেরকে ১৫৪ ধারা মোতাবেক আদালাতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের এই হত্যা মামলায় এরেস্ট দেখানো হবে বলে জানান ওসি। মামলাটি তদন্ত করছেন মহেশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক ইউনিট মাঠে রয়েছে।
এদিকে ৩রা সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় স্থানীয় ভাবে নিহতের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় অংশগ্রণ করেন সংসদ-সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক। জানাজা শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন- বার বার এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তিনি কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার পরামর্শ দেন। গ্রাম আদালত ও শালিস বিষয়ে ফড়িয়া প্রসঙ্গে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন- কোনো মন্দ শালিসকারকের জন্য এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে তাদের ডাটাবেইজ তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনার পর মহেশখালী থানা পুলিশের তৎপরতা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারনের প্রধান আসামিসহ তাৎক্ষণিক একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের একাধিক টিম ওই এলাকায় রয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।