মো. রবিউল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:- গেলো বছরের জুলাই মাসে করোনায় ভাইরাসে মাকে আর নভেম্বরে অসুস্থ্যতায় বাবাকে হারিয়ে ছোট দুই ভাই-বোন আর ভাঙ্গা স্বপ্নকে সঙ্গী করে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছিলো বাংলা বিভাগে স্নাতক পাস করা পিংকি রানী নাথের।
তবে তিনি থেমে যায়নি, পারিবারিক স্বচ্ছলতা আর নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি বছরের জুন মাসে একজন সফল খামারির পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই গড়ে তোলেন একটি হাঁসের খামার। প্রথম দিকে কুমিল্লা থেকে ৪৫০টি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করলেও হাস পালনে বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও সুপরামর্শের অভাবে কিছু সংখ্যক হাঁস মারা যায়। ফলে বর্তমানে তাঁর খামারে ৩৫০টিরও বেশি সুস্থ ও পরিপক্ব হাঁস রয়েছে। যা নিয়ে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন এই তরুণী।
পিংকি রানী নাথ খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের ছদুরখীল গ্রামের মৃত সাধন চন্দ্র নাথ ও লক্ষী রানী নাথের জৈষ্ঠ্য কন্যা। তিনি চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতক পাস করেন। বাবা মা মারা যাওয়ার পর বেশ কয়েক মাস আর্থিক অনটনে কাটালেও তাঁর পরিশ্রম আর ছোট দুই ভাই-বোনের সহযোগিতায় বর্তমানে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা হাঁসের খামার নিয়ে হাঁটছেন সফলতার পথে।
সরেজমিনে গেলে পিংকি রানী নাথ জানান, বাবার রেখে যাওয়া ও নিজের জমানো টাকা দিয়েই চলতি বছরের ৮ই জুন ৪৫০ টি হাঁসের বাচ্চা দিয়েই পারিবারিকভাবে হাঁস পালনের যাত্রা শুরু করেন তিনি। পুরোনো একটি গোয়াল ঘরকেই প্রস্তুত করে নেন হাঁসের ঘর হিসেবে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত (৩ মাস) বাচ্চা ক্রয়, ঘর সংস্কার ও হাঁসের খাবার ক্রয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২-৩ মাসের মধ্যেই ডিম দেওয়া শুরু করবে হাঁসগুলো। তবে সঠিক বাজারজাত করতে পারলে বেশ লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এই নারী উদ্যোক্তা আরও জানান, আমার ইচ্ছা ছিল পড়াশুনার পাশিপাশি কিছু একটা করি, সেই লক্ষে স্থানীয় একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করি। তবে সেখানেও সুবিধা করতে পারিনি। ফলে নিজের চিন্তাধারা থেকেই বাড়িতে হাঁসের খামার গড়ে তোলা। আমি মনে করি আমার মতো শিক্ষিত বেকার যারা আছে তারা অযথা সময় নষ্ট না করে স্বল্প পুজি নিয়ে এই ধরনের খামার গড়ে তোলতে পারেন৷ এতে করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে হওয়া যাবে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সূচয়ন চৌধুরী জানান, পিংকি রানী নাথ একজন নারী উদ্যোক্তা ও খামারি। আমরা আশা করছি তিনি সফল হবেন এবং তাঁর সফলতা দেখে এ উপজেলার অন্যান্য নারী-পুরুষ অনুপ্রোনিত হয়ে খামারি হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন বলে আমার বিশ্বাস।