নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘রুল অব ল’ প্রোগ্রাম, জিআইজেড বাংলাদেশ-এর কারিগরি সহায়তায় ও জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) এবং ব্রিটিশ সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) -এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর ও আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ আয়োজনে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চার দিন ব্যাপি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ ২২ আগষ্ট সোমবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সভা কক্ষে শুরু হয়েছে। উক্ত প্রশিক্ষণে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১২ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ৬ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৮ জন অংশগ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন খান মোহাম্মদ ইলিয়াস, সেন্টেন্স প্ল্যানিং অফিসার, ‘রুল অব ল’ প্রোগ্রাম, জিআইজেড বাংলাদেশ, ইউএনওডিসি-এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর (ড্রাগ এন্ড এইচআইভি/এইডস) আবু তাহের এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী আইয়ুব খান।
এ সময় সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, কারাগারে সেবার মান বৃদ্ধিতে এই প্রশিক্ষণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারাগারের মান উন্নয়নে সরকার যে কাজ করছে তাকে কার্যকর করার জন্য এই ধরণের প্রশিক্ষণ আয়োজনের বিকল্প নেই। তিনি অংশগ্রহণকারী সকলকে মনোযোগ সহকারে প্রশিক্ষণটি গ্রহনের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
জিআইজেড প্রতিনিধি খান মোঃ ইলিয়াস বলেন, সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আমরা খুব কম গুরুত্ব প্রদান করি। কিন্তু, করোনা (কোভিড-১৯) আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক চিন্তার খোঁড়াক দিয়েছে, তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকেও অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। তবেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে- কর্মক্ষেত্রে ও পারিবারিক জীবনে আমরা সকলে সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, ‘রুল-অব-ল’ প্রোগ্রামের আওতায় কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারী, নারী জুডিশিয়াল অফিসার্স এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এই প্রশিক্ষণের পূর্ব পর্যন্ত ২৫টি ব্যাচে মোট ৭২৯ জন (পুরুষ-৩৬৭ ও নারী-৩৬২) সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি অংশগ্রহণকারী সবাইকে প্রশিক্ষণটি মনোযোগ সহকারে গ্রহন করার জন্য পরামর্শ দেন। কেননা এই প্রশিক্ষণটি যারা গ্রহন করছেন তারাই পরবর্তীতে একই প্রশিক্ষণ তাদের নিজ-নিজ কর্মস্থলে কারাবন্দিসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীদের প্রদান করবেন। আবু তাহের তার বক্তব্যেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব প্রদান করেন এবং আরও বলেন যে, তাদের প্রতিষ্ঠানও ইউএনওডিসি স্বাস্থ্য বিষয়ে কারাবন্দিদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রদান করেন।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের এই প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী আইয়ুব খান বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষনার্থীরা নিজেরাই একজন দক্ষ প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠবে যা তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে প্রয়োগ করতে পারবে। এছাড়া কারাগারে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কারাবন্দীদের নিয়ে যে সকল অসুবিধা হয় তা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূর করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রশিক্ষণটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এবং রিসোর্স পার্সন হিসেবে অধিবেশন পরিচালনা করছেন ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফাইড এডিকশন প্রফেশনাল এবং জাতীয় মাদক বিরোধী কমিটির সদস্য ইকবাল মাসুদ, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রের আবাসিক মনোচিকিৎসক ডাঃ মোঃ রাহেনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সেলিম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বিভাগের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হুসনে-আরা-বেগম, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখি গাঙ্গুলী এবং প্রত্যয় মেডিক্যাল ক্লিনিক লিমিটেডের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস। এছাড়া প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষক হিসেবে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য খান মোহাম্মদ ইলিয়াস ও আইয়ুব খান সেশন পরিচালনা করেন।