পর্নোগ্রাফিতে শিশুর প্রবেশাধিকারের মাত্রা নিয়ে শিশুদের ওপর করা একটি জরিপে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে–আত্মীয়, অনাত্মীয় বা বন্ধুদের কৌতুহলে সাড়া দিয়ে শিশুদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি দেখার প্রবণতা বাড়ছে।শতকরা ৭৫.১ জন শিশু, যাদের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল আছে তারা পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখে, শতকরা ১৪ দশমিক ৪ জন মেয়েশিশু অনাত্মীয়ের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে।
বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর করা একটি জরিপে সংস্থাটি বলছে, মোটামুটি প্রগতিশীল দেশেও পর্নোগ্রাফির পর্যাপ্ত ডাটা নেই৷ ৮০ শতাংশ গবেষণা হয়েছে শিক্ষকদের সহায়তায় ছাত্রদের উত্তরদাতা হিসেবে ব্যবহার করে।গবেষণা বলছে, আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক আচরণের পেছনে অনেক সুপ্ত কারণ থাকে।
মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, না-বুঝে কম বয়সে পর্নোগ্রাফি দেখলে সহিংসতাসহ নানা ধরনের অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে শিশু। কেবল অভিভাবকদের সতর্কতা আর শিশু উপযোগী পরিবেশ তৈরীর মধ্য দিয়েই এই ভয়াবহতা থেকে শিশুকে রক্ষা করা যেতে পারে।
২০১৭ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা যায়,জরিপে বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা প্রধাণত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে৷ ঢাকার স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে৷ জরিপটি অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে করা হয়৷ তাতে দেখা যায়, পর্নোগ্রাফি তারা ছবি, ভিডিও, অডিও ও টেক্সট আকারে ব্যবহার করে৷
গত মাসের ৭ জুন(মঙ্গলবার) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।জরিপে শিশুর প্রতি সহিংসতার নানা চিত্র তুলে ধরা হয়।
জরিপে তথ্যানুযায়ী,সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা।তাদের দ্বারা শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ জন শিশু ঘরেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এসব নিপীড়ন চালানো হয় শান্তি ও নিয়মানুবর্তিতার ‘অজুহাতে’। শিশুকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের মধ্যে পড়ে হাত, জুতা, বেল্ট, বোতল দিয়ে মারা, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুল টানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীর পুড়িয়ে দেয়া, অতিরিক্ত শ্রম দিতে বাধ্য করানো এবং ঝাঁকি দেয়া ও ছুড়ে ফেলাসহ নানারকম পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন।
মোট ১১টি জেলায় এই জরিপ চালানো হয়। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙামাটি। ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এদের মধ্যে শহরের ৩ হাজার ১৩৪ জন শিশু এবং গ্রামের ১ হাজার ৯৪০ জন।জরিপের তথ্য বলছে, শতকরা ৬২.১ জন প্রতিবন্ধী শিশু বলেছে, শুধু প্রতিবন্ধী শিশু হওয়ার কারণে তারা পরিবারে ও সমাজে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছেলে শিশু ৭৮.৬ শতাংশ এবং মেয়েশিশু ৫৫.২ শতাংশ।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুকে যেকোনও নির্যাতন থেকে দূরে রাখতে হলে সবার আগে তার নীরবতা ভাঙতে দিতে হবে। বেশিরভাগ সময় শিশু যখন তার পরিস্থিতি অভিভাবককে জানায় তখন তাকে চুপ থাকতে বলা হয়। সেটি না করে শিশুকে শুরু থেকেই কোনটি খারাপ তা শেখাতে হবে। কোন বিষয়গুলো তাকে অনিরাপদ করে তুলতে পারে সেটাও তাকে জানাতে হবে। এই প্রাথমিক পাঠ অভিভাবকই দিতে পারেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তার জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। খারাপ পরিস্থিতি পর্যন্ত যেন শিশুকে না যেতে হয় অভিভাবককে সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত কারওর সঙ্গে অনেকটা সময় একা যেন শিশু না থাকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। শিশুকে মোবাইল দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন,আমাদের নজরদারি জারি আছে সর্বক্ষণ, আমরা ২২ হাজার পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ করেছি। বিষয়টি নজরদারিতে আছে। নতুন নতুন ফরম্যাটে এগুলো দেখা যাচ্ছে বলে শুনেছি। লিংকগুলো আমাদের কাছে পাঠানো হলে তা ব্লক করে দেওয়া হবে।