মোঃ সিরাজুল মনির, চট্টগ্রাম ব্যুরো।
আব্দুল করিমের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায়। গত ২০ বছর আগে চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলে চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে তার প্রবেশ। এসে আমিন জুট মিলের শ্রমিক হিসাবে চাকরি শুরু করে ২০০০ সাল থেকে। চাকরি শুরুর পর থেকে চট্টগ্রামের পাচলাইশ থানার আতুরার ডিপো এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে বসবাস শুরু করে। স্ত্রী ও চার সন্তানের সংসারে তার বেতনের টাকায় চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।
বাসার পাশে কিছু খালি জমি তার কৃষি কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায়। জমির মালিক স্হানীয় শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে শাক ও বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ শুরু করে। প্রথমে স্হানীয় একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার টাকার লোন নেয় কৃষি কাজ শুরু করার জন্য। আর একজন সহযোগি নিয়ে ২০১০ সালে শুরু করে তার চাষাবাদ। প্রথম দিকে একটু সমস্যা দেখা দিলেও পরের বছর থেকে তার অর্থনৈতিক মুক্তি দেখা দেয়। চোখে আশার আলো দেখতে পায়। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি আব্দুল করিমকে। চলতি মৌসমে আব্দুল করিম তার ক্ষেত থেকে প্রায় সাড়ে তিনলাখ টাকার শাক বিক্রি করেছে যা রীতিমত অবাক করে দিয়েছে স্হানীয়দের।
এরকম চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর, হাজীপাড়া, পতেঙ্গা সহ আরও বেশ কিছু এলাকায় অনেকে এ শাক সবজি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যদিও নগরীর বেশকিছু জায়গাই আবাদী জমি গুলো বিভিন্ন কারখানা এবং আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। তারপরও নগরীর পাশ্ববর্তী যে জমি রয়েছে তাতেও অনেকেই এখনো তাদের পূর্ব পুরুষের চাষ ধরে রাখার চেষ্টা করতেছে।
কৃষি অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তথ্য মতে একসময় প্রায় বিশ হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন রকমের শাক সবজি চাষ হতো শুধু চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকাতে এখন তা নেমে কয়েকশ বিঘাতে চলে এসেছে। তার কারণ হলো নগরীর নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠার কারনে মানুষ জমিতে চাষ বন্ধ করে দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করার ফলে আবাদী জমি কমে গেছে।
তারপর নগরীর আশেপাশে যে জমি গুলো রয়েছে তাতে এখনো শাক সবজি চাষ করে অনেকে স্বাবলম্ভী হচ্ছে এবং পরিবারের সমস্ত খরচ চালাচ্ছে সে আয় থেকে।
অপরদিকে বেশকিছু জায়গাই খালি জমি থাকলে ও শিল্প কারখানার বর্জ্য যাওয়ার কারনে চাষাবাদ নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান চাষীরা। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা জরিমানা সহ বিভিন্ন আইনি ব্যবস্হা গ্রহণ করি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন চট্টগ্রামের বেশিরভাগ অঞ্চলের মাটি বেলে দোআশ হওয়ার কারণে যে কোন ধরনের চাষের উপযুক্ত তাই এখানে সব ধরনের শাক সবজির বাম্পার ফলন হয় সবসময়ই।