আমাদের সমাজে এখন বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়টি শিশুদের খেলনার মতো রুপ নিয়েছে।এতটা সহজ ভাবছে আমাদের সমাজের কিছু মানুষ।ডির্ভোস -শব্দটা শুনলে আমাদের কানে বা মনে একটা ধাক্কা লাগে।আমাদের সমাজের অনেকে বলে উঠে-আল্লাহ ডির্ভোস হয়েছে ওদের।আচ্ছা কার সমস্যা ছিল ছেলের নাকি মেয়ের, আগে বুঝছিলাম এদের মধ্যে সমস্যা ছিল বা আমরা অনেকে বলি-আল্লাহ ওদের দেখে বুঝা যায় না ডির্ভোস হবে, কতো সুন্দর লাভ মেরেজ ছিল,কি সুন্দর লাগতো ওদের,আসলে আজকাল ফেসবুক বা ইনেসটাগ্রামে সবাই শো আফ করে, ভিতরে ভিতরে ওরা সুখী ছিল না।অথবা বলি, আল্লাহ ওরা সোশ্যাল মিড়িয়ায় এতো জনপ্রিয় তবুও কেন ওদের ডির্ভোস হচ্ছে।আসলে আমরা না ভেবে অনেকগুলো কথা বলে ফেলি তাই না।আমরা যাচাই না করে দোষ দিয়ে দেয়, কেন ওদের ডির্ভোস হচ্ছে- এসব জানাটা কি খুব বেশি দরকার?কখনো কি অনুভূতি দিয়ে ভেবে দেখেছি ওদের মনের অবস্থাটা কেমন হচ্ছে,ওরা কেন একসাথে থাকতে চায় না বা পিছনের কারণটা কি? আমাদের সমাজের অনেকে কষ্টের মধ্য থেকেও ডির্ভোস নিতে পারছে না বা বাধ্য হয়ে ও একসাথে থাকতে হয় তার পিছনের কারণটা হল তাদের সাথে আমাদের সমাজের আচরণটা কেমন হবে তাদের যদি সন্তান থাকে সন্তানদেরকে সমাজ কেমন চোখে দেখবে -এমনি মনোভাব কাজ করে। তাহলে দেখুন কতটা খারাপ চরিত্রে আমরা বা আমাদের সমাজের মানুষ অভিনয় করে।কিন্তু বর্তমানে আমরা সবাই ভাল কথা বলি বা বলার চেষ্টা করি বা ভাল সাজতে চায় বা সাজার অভিনয় করি বা সোশ্যাল মিড়িয়াতে ভাল সাজি।তবে খারাপ নাকি ভাল চরিত্র আমাদের বা আমাদের সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের আসল রুপ -প্রশ্ন করুন নিজেকে।
একজন মানুষ যখন ডির্ভোসের চিন্তা করে তখন তার মাথায় অনেকগুলো বিষয় আসে যেমন তাকে সমাজের মানুষ কি বলবে,তার পবিবারকে কিভাবে দেখবে বা আরেকটু চেষ্টা করি মানিয়ে নিতে বা আরেকবার সুযোগ দেয় বা অনেকে ভাবে আমিতো মানুষটিকে একসময় ভালবাসতাম এখনো ভালবাসি, হয়তো সে ঐ সময়ে খারাপ ছিল তবে বাকি সময় তো সে আমার সাথে ভাল আচরণ করে এভাবে সে একটা সম্পর্কের সার্কেলে ঘুরতে থাকে। আসলে আমাদের সবার সম্পর্কের একটা সার্কেল থাকে আর মানুষ এ সার্কেল এ ঘুরপাক করে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটা সম্পর্কের সার্কেলে প্রথমে কোন ঘটনা ঘটার আগে তা ইঙ্গিত দেয় বা ভয় দেখায় বা ভয় দেখিয়ে বলে তুমি এমন কেন করছো আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।তারপর দ্বিতীয়বারে সে ঘটনা ঘটে গেল সেটা আপনাকে যেকোনো নির্যাতন করে,হতে পারে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন বা অসৎভাবে ব্যবহার করে ।তারপর শুরু হল নতুন একটা ব্লেইম গেইম।যেখানে মানুষটি বলে আমি তোমার সাথে এমন করতে চায় নি বা চায় না বা বলে তুমিই তো আমাকে রাগিয়ে দাও।তারপর আপনি ভাবেন আসলে কি আমার দোষ,আমি কি এমনটা না করলে হতো,আমার জন্যেই সে এত খারাপ ব্যবহার করলো।
আপনি কাউকে বলার আগে নিজে নিজের মধ্যে মরে যান।যখনি আপনার কাধেঁ সে দোষ চাপিয়ে দেয় তারপর শুরু হয় আরেকটা অভিনয় মানুষটি আপনাকে সরি বলে বা আর করবো না বা বলে আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি বা বলে তুমিও তো আমাকে অনেক ভালবাস -তখন আপনি সব ভুলে যান।আপনারা যারা এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বা আছেন একটু মিলিয়ে দেখুন না মিলে কিনা আপনার সাথে।
তারপর শুরু হয় সেই আগের মতো ঘটনা,তখন আপনি আবারো ভাবেন দেখি না আরেকটু চেষ্টা করতে বা আপনার সন্তান থাকলে বা আপনি যদি ভাবেন আমি মেয়ে বা আমার কোন আর্থিক সার্পোট নেই তখন বলেন থাক না একটু কষ্ট হলেও আমার সন্তানের জন্য থেকে যায় বা মানিয়ে নেয় বা আমি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব।
ঠিক একটা ছেলেও হতে পারে সেরকম ঘটনা।তার উপর তার স্ত্রীর প্রতিনিয়ত করা খারাপ বিষয়ের উপর চাইলে সে শাস্তি দিতে পারে।তবে সে যদি ভাবে না স্ত্রীকে মারধর করা বা নির্যাতন একটূ নিচু মানসিকতা বা ভাল মানুষ এমন করে না।তখন সেও একই ভাবনা ভাবে।
বৈষম্য শুধু মেয়েদের উপর হয় তা না ছেলেরাও বৈষম্যের শিকার হতে পারে। এতোক্ষণ এসব বলার কারণ দেখুন না আপনি একধাপ পদক্ষেপ নিয়ে চেষ্টা করুন।আসলে এতোক্ষণ বললাম আমাদের সমাজের একটা বাস্তব প্রেক্ষাপট -যেখানে ধীরেধীরে শেষ হয় আমাদের সম্পর্ক গুলো।
এখন বলবো আরেকটি দৃশ্যপট,যেখানে দেখা যায় দুজন মানুষের মধ্যে মনোমালিন্য হলে সহজে ডির্ভোসের চিন্তা করে বা বিয়ের কিছুদিন পর দেখলো একজনের ভাল লাগছে না তখন বলে তোমার সাথে আমার হবে না, চলো ডির্ভোসের সিদ্ধান্তে যায়।আসলে ব্যাপারটা এমন হল যে আমি একটা দোকান থেকে পছন্দমত একটা জিনিস আনলাম,বাসায় এনে ভাল লাগছে না আবার গিয়ে বদলিয়ে আনি।
আসলে আমাদের সমাজের কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডির্ভোস বিষয়টা সহজ হয়ে যায় যার কারণে কিছু মানুষ সম্পর্কের মধ্যে ভাবে কেন আমি ওর কাছে হারবো বা আমার রাগই প্রাধান্য পাবে বা আমার ইগো বজায় থাকবে।যেটা আসলে একটু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত।
ধরি একজন মানুষের কাছে অনেকগুলো অপশন আছে সে চাইলে এই দামি গাড়ি করে কোথাও যেতে পারবে বা রিকশায় করে বা যে কোনভাবে পারবে -তখন সে দামি গাড়ি বেছে নেয়। যদি তার শুধু হেটে যাওয়ার অপশন ছাড়া আর উপায় না থাকে তখন সে নিজেকে কষ্ট করে হেটেঁ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে।ঠিক তেমনি ডির্ভোস বিষয়টি সহজ হয়ে যাওয়ায় অহরহ বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।
আসলে আমাদের সমাজে একদল আছে যাদের খুব প্রয়োজন এটি। তারা পারছে না।আরেকদল আছে যাদের রাগ,ইগোর কাছে সম্পর্কটি হেরে যায়।
সমাজের প্রতিটা মানুষের বুঝা উচিত বিয়ে মানে শুধু দু’জন মানুষের সম্পর্ক না বরং দু’টো পরিবারের মিলন।তাই ডির্ভোস নিতে সঠিক পরিকল্পনা নিন।
লেখক:আয়েশা সিদ্দিকা
শিক্ষার্থী:২য় বর্ষ,রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।