পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমাত্র পার্বত্যঞ্চলের মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝেন। এজন্য তিনি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে হবে। তিনি ছাড়া শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কেউ করবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও মা, বাবা, ভাই হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর উপলব্ধি থেকে পার্বত্যঅঞ্চলের দুঃখ বুঝেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন গুম করে কখনোই শান্তি ফিরে আসবে না। শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের শান্তি ফিরিয়ে আনতে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এরপরও পার্বত্য অঞ্চলে সংঘাত, খুন, গুম, চাঁদাবাজি কখনোই মেনে নেয়া যায় না।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এসব কথা বলেন।
সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে হেডম্যান সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, বান্দরবান জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিংইরয়ং ম্রো, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, খাগড়াছড়ি মং সার্কেল চীফ সাচিং প্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ হেডম্যানরা বক্তব্য রাখেন। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায়।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর রীতিনীতিগুলো আছে বলেই পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধান করা হচ্ছে। আর হেডম্যান ও কার্বারিরা হলেন পাহাড়ের প্রাণ। তারাই সমাজের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব ধরনের সুবিধা-অসুবিধা সমাধান দিয়ে পাহাড়কে গতিশীল রেখেছেন। যার ফলে আদালতে বিচার কার্য কম থাকে। এই অল্লিখিত আইনগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
হেডম্যানদের উদ্দেশ্যে পার্বত্য মন্ত্রী বলেন, আপনারা অফিসের কথা বলছেন। আপনারা চাইলে নিজ ঘরকে অফিস বানিয়ে জনসেবা দিতে পারেন। দু:খের বিষয় আপনারা জানেন না আপনাদের মৌজায় কি পরিমাণ জুম চাষ হয়। কয়টি স্কুল-কলেজ আছে। রাস্তা-ঘাট সংস্কারে আপনারা চাইলে উদ্যোগ নিতে পারেন। ডিসির সাথে কথা বলে উন্নত জুম চাষের ব্যবস্থা করতে পারেন। কিন্তু রাজা বাবু, হেডম্যান, কার্বারীদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। সমন্বয় না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।
মন্ত্রী চাকমা সার্কেল চিফের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হেডম্যান-কার্বারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য বলা হচ্ছে। অথচ আপনারা ডিসির সাথে বসে এসকল সমস্যা সমাধান করতে পারেন। সমস্যা যেখানে আছে সেখানে সমাধানও আছে।
হেডম্যানদের স্থায়ী কার্যালয়ের ব্যাপারে মন্ত্রী জানান, আমি এ ব্যাপারটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলবো। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যবস্থা করে নিবেন। কারণ হেডম্যান কার্বারিদের ঐতিহ্যবাহী এ প্রথাকে শক্তিশালী করতে সরকার সব ধরণের কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে। সকল হেডম্যান কার্বারিদের দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এলাকার সকল মানুষের মঙ্গলে কাজ করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলার ৩৫০ জন হেডম্যান কার্বারী অংশগ্রহণ করেন।