মোঃ আলী আকবর
২০২০ সালে করোনার আঘাতে ওলট- পালট হয়েছে বিচার ব্যবস্হাও এর মধ্যেই অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার আপিল,নিষ্পত্তি, বড় বড় রাগব বোয়ালদের আইনের আওতায়, কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় সম্পর্কে আইন ও বিধি প্রনয়ন,বহুল আলোচিত মামলার রায় হয়েছে।তবে সব কিছু ছাপিয়ে ২০২০ সালের আলোচনায় ছিল দেশে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা। একই সাথে ৬ আগস্টের পর থেকে ২০২০ সালের সুপ্রিমকোর্টের সব অবকাশকালীন ছুটি বাতিল ছিল দেশের আদালতাঙ্গনে প্রথম ঘটনা তবে পরবর্তী সামান্য কিছু বাহাল রাখে। ২৬ মার্চ থেকে উচ্চ আদালত সহ দেশের সব আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার তারপর কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ায়।পরে সরকারের এক আদেশে ১১ মে ভার্চুয়াল আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়,পরে সেটা আইনে পরিনত হয়।এরপর ৩০ জুলাই বিচারিক আদালতে ৫ আগস্ট থেকে শারীরিক উপস্থিততে বিচার কাজ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আলোচনা – সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ধর্ষণকান্ডও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিক কয়েকটি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠে দেশ।এরমধ্যে ঢাবির শিক্ষার্থী ধর্ষণ, সিলেট এমসি কলেজে গৃহবধু গন ধর্ষণ, নোয়াখালীতে গৃহ বধুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় দেশ আরও উত্তাল হয়ে উঠে এবং আইনকে আরও কঠোর করার আওয়াজ ওঠে। পারে সরকার বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষনের সর্বোচ্চ শান্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান কার্যকর হিসাবে জারি করে । এছাড়াও যে সকল বিষয় নিয়ে আদালতাঙ্গন আলোচনায় ছিল তা হলঃ ধর্ষক মজনুর বিচার : বছরের শুরুতে ৫ ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে সড়কে পেছনে নির্জন স্হানে মজনু নামে এক বখাটের কাছে ঢাবির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। পারের দিন সকালে অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আসামি করে ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করে, ঢাবি সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন পেশার লোকজন আন্দোলনে নেমে পড়ে, পারে মজনুকে গ্রেফতার করে, ১৬ ই জানুয়ারি ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় মজনু , সর্বশেষে একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত । উচ্চ আদালতের আলোচিত আদেশ এবং রায় : রাতের আদেশ, বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ শিশুকে জামিন না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট তাদের যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র পাঠানোর নির্দেশ দেয়. পরে ওই শিশুদের পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় কান্নার দৃশ্য হৃয় বিদারক আবস্থা সৃষ্টি করে.পরে রাতেই হাই কোর্ট তাদের জামিনের নিষ্পাত্তির আদেশ দিয়ে ৪ শিশুকে রাতের মধ্যেই তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া আদেশ দেন। ৪ ও ৬ ই ফেব্রুয়ারী জি কে শামীম হাই কোর্টের ২টি বেঞ্চ থেকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় জামিন নেয়। পরে কিছু দিন পর বিষয়টি গনমাধ্যমে আসলে হাই কোর্ট তার জামিন বাতিল করে। প্রতারক সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে ৩২ মামলা : ২০২০ সালে আলোচিত – সমালোচিত ব্যাক্তির মধ্যে অন্যতম সাহেদ করিম,করোনা মহামরিতে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করেছে, গনমাধ্যমে নিজেকে অত্যন্ত ভালো মানুষ বলে জাহির করতেন, সমাজের উচুঁ শ্রেনীর লোকজনের সাথে তার খুব সুসম্পর্ক ছিল, এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, করোনা পরীক্ষার নামে ভূয়া রিপোর্ট সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। করোনায় ভূয়া সনদ দেওয়ার অপরাধে গত ১৫ ই জুলাই সাতক্ষীরায় ভরতে পলানোর সময় গ্রেফতার হয়,পারে বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে ৩২ টি মামলা হয়। প্রতারক আরিফুল হক ও সাবরিনা : প্রতারক সাহেদ করিমের মত জেকেজি হেলথ্ কেয়ারের আরিফুল হক ও ডাঃ সাবরিনা দম্পতি, তারাও মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে, করোনা পরিস্থিতিতে টাকা নিয়ে ভূয়া রির্পোট দিতেন ২৩ জুন আরিফুল হক ১২ জুলাই ডাঃ সাবরিনা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ১ম রায় : ২০১৪ সালে পুলিশের হেফাজতে জনি নামে এক ব্যাক্তির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাচঁ আসামির মধ্যে ৩ জনকে যাবজ্জীবন ২ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত, গত ৯ সেপ্টেম্বর এই আদেশ দেন। ২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইন প্রনয়নের পর এটি ১ম রায়। লালমনিরহাটে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা : গত ২৪ অক্টোবর লালমনিরহাটে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার দায়ে গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মোঃ শহিদুনন্নবী নামের এক ব্যাক্তি পুড়িয়ে মেরে লাশ ছাই করে দেওয়া হয়েছে, উক্ত ঘটনায় ১১৪ জনকে এজহার মূলে বাকি দের অজ্ঞাত রেখে ৩ টি দায়ের করা হয়, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। মেজর সিনহা হত্যাকান্ড : গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ বাহার ছড়া মেরিন রোড শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ খাঁন নিহত হয়। এই ঘটনায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লেয়াকত সহ ৯ জনকে আসামি করে কক্সবাজার আদালতে মেজর সিনহার বোন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে, পর্বতীতে প্রদীপ সহ ৭ জন আদালতে আত্মাসর্মপন করেন। গত ১২ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত সহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে, পরে ওসি প্রদীপের নামে বিভিন্ন থানায় আরো অনেক মামলা হয়। এই ঘটনায় দেশ-বিদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। খালেদা জিয়ার মুক্তি : দীর্ঘ ২৫ মাস কারাভোগের পর গত ২৫ মার্চ প্যারেলে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, পরবর্তীতে আরো ৬ মাস প্যারেলের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সিলেটে রায়হান হত্যা মামলা : গত ১১ অক্টোবর সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে মাত্র ১০,০০০ টাকার জন্য রায়হান নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠে , এতে প্রধান অভিযুক্ত ও বরখাস্ত হওয়ার এসআই আকবর হোসেন ভূইঁয়াকে গত ৯ নভেম্বর সিলেট কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে জনতার সাহায্য পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে আরো কয়েকজন পুলিশ গ্রেফতার ও বরখাস্ত হন। পাপিয়া গ্রেফতার : গত ২২ ফ্রেবরুয়ারী বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের জন্য নরসিংদির যুব ও মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেফতার করে। বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার রায় : বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মানলার রায় ঘোষণা হয় এতে স্ত্রী মিন্নী সহ ৬ জনকে ফাঁসি ৪ জনকে খালাস প্রধান করে আদালত। চট্টগ্রামে আমজাদ হত্যা মামলার রায় : গত ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বহুল আলোচিত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের মামলার ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করে আদালত, এতে বর্তমান চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিন সহ ১০ জনকে ফাঁসি,৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ৪ জনকে খালাস প্রদান করে আদালত। আল্লামা শফী কে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা : হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে তার শ্যালক মাঈন উদ্দিন ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিগত বছরে করোনা মহামারিতেও সরকার বিভিন্ন প্রয়োজনে কতগুলো আইন ও বিধি প্রনয়ন করেছেন সে গুলো মধ্যে অন্যতম হলঃ কোম্পানি আইন, ২০২০। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ২০২০। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০২০। জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধিমালা আইন, ২০২০। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২০। পেট্রোলিয়াম আইন, ২০২০। মুক্তি বিষয়ক আইন, ২০২০। মাছ ও মাছ উৎপাদন বিধি, ২০২০। সমবায় বিধিমালা, ২০২০। আর্মি আইন, ২০২০। বাংলাদেশের ব্যাংক আদেশ, ২০২০। মাদ্রাসা শিক্ষা অডিনেন্স এ্যাক্ট, ২০২০। সর্ব শেষ ২৮ ডিসেম্বর কোন হজ্জ ও ওমরাহ এজেন্সি সৌদিয়া গিয়ে অপরাধ করলে বাংলাদেশে বিচার করার সুযোগ রেখে ” হজ্জ ও ওমরাহ ব্যবস্হাপনা আইন, ২০২০ এর খসড়া নীতি গত ভাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রী সভা।