‘শেষ বয়সে এসে এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি আমার ৫২ বছরের সাংবাদিকতার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছে।’ আর দেশের অন্যতম বৃহৎ এ শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি গণমাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। যা গণমাধ্যমে অনন্যা দৃষ্টি স্থাপন করেছে। তৃণমূল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকায় বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাডওয়ার্ড পাওয়ার পর এই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন রাঙ্গামাটি জেলার প্রবীণ সাংবাদিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ। রবিবার (৩০ মে) দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ আয়োাজিত ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’-এ খ্যাতিমান সাংবাদিক হিসেবে এ কে এম মকছুদ আহমেদ রাঙ্গামাটি জেলা থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট, সম্মাননা পত্র ও উত্তরীয়। অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার ৬৪ জন প্রবীণ সাংবাদিক ছাড়াও ১১ জন সাংবাদিককে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
প্রবীণ এ সাংবাদিক তার অনুভূতি প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘জীবনে অনেক প্রোগ্রামে গেছি। অনেক পুরষ্কার অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। কিন্তু জীবনের এই শেষ সময়ে এসে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে আমাদের মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানিত করল, তা সত্যিই বিরল।
এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, ‘জীবনের সব পাওয়া না পাওয়া এই সম্মাননার মাধ্যমে পূরণ হয়ে গেছে। আর কোনো পাওয়ার নেই এই শেষ সময়ে। তবে খুব করে চাইব যেন এই আয়োজনটা সব সময় চালু রাখা হয়।’
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’- পাওয়ার এই স্বীকৃতি পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে। বিশেষ করে পাহাড়ে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা সাংবাদিকতায় অবদান রাখতে সচেস্ট হবে। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকতা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই সম্মাননা আমাকে নতুন করে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, তাঁরা যেন এই মহৎ ধারা অব্যাহত রাখেন, তাহলে এই পেশায় সুস্থ ধারার মানুষ এগিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এর জুরিবোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
চট্টগ্রাম বিভাগের গুণী সাংবাদিকরা হলেন: চট্টগ্রাম জেলা থেকে নাছির উদ্দিন চৌধুরী, কুমিল্লার আবুল হাসানাত বাবুল, ফেনীর ওছমান হারুন মাহমুদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ আরজু মিয়া, রাঙ্গামাটির এ কে এম মকছুদ আহমেদ, নোয়াখালীর একেএম জুবায়ের, চাঁদপুরের গোলাম কিবরিয়া, লক্ষীপুরের হোসাইন আহমেদ হেলাল, কক্সবাজারের প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, খাগড়াছড়ির তরুণ কুমার ভট্টাচার্য ও বান্দরবানের প্রিয়দর্শী বড়ুয়া।
এ কে এম মকছুদ আহমেদের জীবনীঃ- আলহাজ্ব এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ। পিতার মৃত মো. জামাল উল্লাহ, মাতা-জমিলা খাতুন। ১৯৪৫ সালের ১০জুলাই চট্টগ্রাম মীরসরাই উপজেলা উত্তর মগাদিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে একই ইউনিয়নের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৬৮সালে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। এর পর ১৯৬৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামস্থ দৈনিক আজাদীর রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি হিসাবে সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়। ১৯৭৩ দৈনিক জনপদ জেলা সংবাদদাতা, ১৯৭৪ দৈনিক পূর্বদেশ, বার্তা সংস্থা এনাতে, ১৯৭৪-৭৭ এবং ১৯৭৯-৮৬ বাসসে কর্মরত ছিলাম, ১৯৭৬ সন থেকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাক (১৯৭৮ইং থেকে) বর্তমানে জেলা প্রতিনিধি দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৮৬-৮৯ পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদদাতার পাশাপাশি নিউ নেশন এর জেলা সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৯২-৯৩ দি টেলিগ্রাফ পত্রিকায়, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ থেকে জানুয়ারী ২০০১ পর্যন্ত দি ডেইলী ইন্ডিপেনডেন্ট এর রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা এবং ১৯৮৩-১৯৯৮ইং পর্যন্ত বিবিসির জন্য কাজ করেছিলেন। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশ্বের নিকট পরিচিত করে তুলতে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।
জেলা সংবাদদাতাঃ-জেলা সংবাদদাতা বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম ১৯৯৫ সাল হতে ও রাঙ্গামাটি কেন্দ্রে ২০০৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার রাঙ্গামাটি বার্তা বিভাগের জেলা সংবাদদাতা হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিঃ এর ২০১৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত এবং জুন ২০০৫ থেকে নিউ নেশানের ২০০৮ পর্যন্ত জেলা সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
প্রকাশকঃ- চাক্মা-মারমা কথোপকথন (জুভাপদ) (১৯৭৭), নোয়ারাম চাক্মা প্রণীত গোজেন লামা (১৯৭৭), পরিবার পরিকল্পনা প্রাথমিক গান (১৯৭৭) অধীর কান্তি বড়ুয়া প্রণীত প্রাথমিক বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম (শ্রেণীর পাঠ্য) হাবিবুর রহমান মজুমদারের রাঙ্গামাটির ভাবনা (কবিতার বই), নন্দলাল শর্মার পার্বত্য চট্টগ্রামের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা। সৈয়দ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদের শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, করমালী। এ্যাডভোকেট প্রতিম রায় পাম্পুর পার্বত্য আইন তত্ত্বেও প্রয়োগে। ত্রিপুরা ভাষার বর্ণমালা-মহেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (২০০২), আকাশে হেলান দিয়ে-নন্দলাল শর্মা (২০০৩)। পরিবেশক জেলা প্রশাসক কর্তৃক সম্পাদিত রাঙ্গামাটি বৈচিত্রের ঐকতান (২০০৫)। স্বত্বাধিকারী রাঙ্গামাটি প্রকাশনী।
সম্মাননা ও পদক ঃ- মুক্তিযুদ্ধের বিজয় রজত জয়ন্তী, রাঙ্গামাটি রোটার্যাক্ট ক্লাব ও চট্টগ্রাম ডাউন টাউন (১৯৯৫), পরিবার পরিকল্পনা প্রচার সপ্তাহ এফপিএবি (১৯৯৫), সুধীজন ও গুনীজন সংবর্ধনা খেলাঘর আসর (১৯৯৬), ফুলকঁড়ির আসর ১৯৯৯, শিল্পী নিকুঞ্জ-সাংবাদিকতায় অবদান-২০০১, ১৯৯০সনে “আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনষ্টিটিউট এর পৃথিবীর পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নামক” বইতে জীবন বৃত্তান্ত স্থান পেয়েছে।
সম্পাদক প্রকাশকঃ-বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বপ্রথম ও তৎকালীন একমাত্র সংবাদপত্র সাপ্তাহিক বনভূমি (১৯৭৮ইং) দৈনিক গিরিদর্পণ (১৯৮৩ ইং) বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র যার বয়স বর্তমানে ৩৯ বছর পূর্ণ করে ৪০ শে পা রেখেছে।
সংগ্রহীত:- দৈনিক গিরিদর্পণ।