কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা হেডম্যান পাড়া গ্রামের অংসালা মারমা, তার দুর্গম পাহাড়ী বাগান থেকে শজনে ডাঁটা সংগ্রহ করে সড়কের পাশে এনে বস্তা বোঝাই করছে। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব শজনে ডাঁটার বস্তা পন্য বাহী ট্রাকে চলে যাবে ময়মনসিংহ জেলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। একইভাবে কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এলাকার তম্বপাড়া, সাফছড়ি সহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার শজনে ডাঁটা চাষী মিনিপ্রু মারমা, সুজন তনচংগা, আপাই মারমা সহ বেশ কয়েকজন চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তারা শজনে ডাঁটা সংগ্রহ, বস্তা বোঝাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছানো পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কাপ্তাই – ঘাঘড়া সড়কের বিভিন্ন এলাকায় গেলেই চোখে পড়বে পাহাড়ে উৎপাদিত এসব শজনে ডাঁটা কেজি ধরে বন্টন করে প্যাকেটজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। কয়েকজন শজনে ডাঁটা চাষীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, পাহাড়ের এই শজনে ডাঁটা স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে এটি সহজলব্য নয়। তাই গ্রাম কিংবা মফস্বল থেকে শহরেই এই শজনে ডাঁটার চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে চাষীরা জানান। তাছাড়া শজনে ডাঁটার বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন থাকার ফলে এটি অনেকটা মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি উপকারি বলে জানা যায়। এছাড়া হজম স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই শজনে ডাঁটা।
শজনে ডাঁটার চাষে সফলতা পাওয়া ওয়াগ্গা এলাকার চাষী অংসালা মারমা আরো জানান, বড় ধরণের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শজনে ডাঁটার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি এর বাজার দর ভাল থাকে। এই শজনে ডাঁটা বিক্রয় করে তিনি এর পূর্বেও ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। শুধু তিনি নয়, এটি চাষের সাথে জড়িতরা ইতোমধ্যে এর ব্যাপক সুফল পাচ্ছে এবং অনেকেই লক্ষাধিক টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শজনে গাছের সংখ্যা ও উৎপাদন। শজনে ডাঁটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতির সজনে বছরে একবার ফলন পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে আরো একটি প্রজাতির নাম বারোমাসি শজনে। বছরে তিন-চার বার ফলন পাওয়া যায়। শজনে গাছ যে কোনো পতিত জমিতে গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই শজনে গাছ জন্মায়। এই গাছের তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অযত্ন অবহেলায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে গাছটি। তবে বর্তমান সময়ে বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করে জমিতে রোপন করা হচ্ছে। বড় ও মাঝারি ধরনের একটি গাছে তিন থেকে চার মণ পর্যন্ত শজনে পাওয়া যায়। তাছাড়া আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হয়ে থাকে এই শজনে ডাঁটার। অপরদিকে শজনে ডাঁটা ও পাতা দুইটিই শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুষ্টি ও ঔষধি গুনাগুন এর জন্য সবার কাছে জনপ্রিয়।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলায় বর্তমানে আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু সহ বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি শজনে ডাঁটা বিক্রয়ে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা। তাই বিনা খরচে কিংবা কম পরিশ্রমে সর্বাধিক আয়ের জন্য শজনে ডাঁটা চাষ দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।