প্রকৃতির দখিনা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। গাছে গাছে বসেছে পলাশ, শিমুলের মেলা। কৃষ্ণচূড়ার ডালে আগুনলাগা রঙ। ফুলে ফুলে ভ্রমর করছে খেলা। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাগুন। মাঘের জড়তা ভেঙে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। একই সঙ্গে আজ উদযাপিত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। চারদিক ছড়াবে তাই লাল-বাসন্তী। বসন্তকে জড়িয়ে ধরেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার শুভেচ্ছা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, বাবা-মা-ভাইবোন, বন্ধু সবার ক্ষেত্রেই।
বসন্ত উৎসবের কথা পুরাণেও বলা আছে। ১৫৮৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। সেই সময়ে বাংলা বর্ষে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। তখন ঋতুর ধারণাটি স্পষ্ট করা না হলেও বসন্ত উৎসবকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। তাই বসন্তের গৌরব ও ঐতিহ্য অনেক দিনের, অনেক যুগের, অনেক শতাব্দীর।
কথিত আছে, প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। সে সময় জুনোকে মনে করা হতো নারী ও প্রেমের দেবী। তাই ভালোবাসার দিবসটি ১৪ ফেব্রম্নয়ারি নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। ২০০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস সেদেশে যুবকদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেন। সম্রাটের ভাবনা ছিল, যুবকরা বিয়ে করলে যুদ্ধে যাবে কে? সম্রাটের এই নিয়মের বিরোধিতা করেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু একদিন ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে নেওয়া হয়। দেশজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারাগারের জেলারের একজন অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করে। তাদের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে ওঠে। ধর্মযাজক হয়েও নিয়ম ভেঙে তিনি প্রেম করেন। আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড দেন। সে তারিখটি ছিল ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রায় দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।