মো. রবিউল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার:- খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার ঢাকাইয়া শিবির এলাকার মো. নূর আহমদ তিন দশক ধরে প্রবাসে (কুয়েত) থেকে অর্জিত সঞ্চয় দিয়ে দেশে ডেইরী ফার্ম করার স্বপ্ন দেখছিলেন। পরিকল্পনা মাফিক কাজ শেষের আগেই স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে! পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের পরিচয়ে মোটা অংকের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ওই রেমিট্যান্স যুদ্ধার পুত্র মো. নূরুদ্দীন সাগর(২৩)কে গত বছরের ২৩ মে রাতে বাড়ী থেকে তুলে নেয় সশস্ত্র গোষ্টিরা। ঘটনার দীর্ঘ ৮ মাস সময় অতিবাহিত হতে চললেও এখনো অপহৃত সাগরকে উদ্ধার করতে পারনি পুলিশ।
সাগর অপহরণের পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে মোবাইলে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৫ ব্যক্তিকে আটক করছে। কিন্তু অপহৃত সাগরের সন্ধান পায়নি। এদিকে পুত্র শোকে রেমিট্যান্স যুদ্ধা দেশে ফিরে এখন সস্ত্রীক মিনিস্ট্রোকে মৃত্যুশয্যায়! এঘটনায় পুরো পরিবার হতাশা ও আতংকে দিনাতিপাত করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঢাকাইয়া শিবির এলাকার প্রবাসী (কুয়েত) মো. নূর আহমদ গত ৩২ বছর যাবত কুয়েতে কর্মরত। স্ত্রী,৪ পুত্র ও ৪ কন্যার সংসার একটু সুখ শান্তির আসায় তাঁর অর্জিত সঞ্চয় দিয়ে বাড়িতে ডেইরী ফার্ম করার পরিকল্পনা ২০২১ সালে পুত্র মো. নূরুদ্দীন সাগরকে দিয়ে পুৃঁজি বিনিয়োগ করে ডেইরী ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। কে জানত এই উদ্দ্যোগের ফলে রেমিট্যান্স যুদ্ধাকে পুত্র বলি হতে হবে! ফার্মে কাজ শুরুর পর পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসিতখীসা)এর নামে সশস্ত্র গোষ্টি সরাসরি এসে ফার্মে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করেন! একাধিক বার চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় একই বছরের ২৩ মে রাতে সশস্ত্র অবস্থায় মো. নূরুদ্দীন সাগর(২৩)কে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এর পর সাগরের ছোট ভাই মো. সালা উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে থানায়,মামলা করেন।
এদিকে পুত্র শোক প্রবাসে ব্যবসা- বাণিজ্য অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরেন পিতা মো. নূর আহমদ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পুত্রকে না পেয়ে শোক ও হতাশায় মিনিস্ট্রোকে অসুস্থ হন সাগরের মা- বাবা! পুলিশ এই দীর্ঘ সময়ে মামলা তদারকি করতে গিয়ে সাগরকে ছেড়ে দেওয়ার প্রলোভণে মোবাইলে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় ৫ ব্যক্তি ( বিকাশ) দোকানদারকে (সাতকানিয়াসহ) বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করলেও অপহরণের বিষয়ে কোন তথ্য বা ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সাগরের অসুস্থ পিতা ও দেশের একজন সফল রেমিট্যান্স যুদ্ধা মো. নূর আহমদ পুত্র হারানোর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন! বলেন, দেশ উন্নয়নের অংশীদার একজন রেমিট্যান্স যুদ্ধার পরিবার যদি দেশে নিরাপদ থাকতে না পারে,তাহলে কে দেশে নিরাপদ থাকবে? আমি তিন দশক প্রবাসে থেকে দেশ ও পরিবারকে যা দিয়েছি আজ সবই বিফলে গেল! সাগরকে তুলে নেওয়ার পর সন্ত্রাসীরা তাকে ছাড়বে, ছাড়বে বলে বিভিন্ন মোবাইলে ৪লক্ষ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা প্রতারক চক্রের হাতে গেছে। যা পুলিশি তদন্তে আটক ৫ ব্যক্তির তথ্যে জানা গেছে।
আমি মরার আগে পুত্র সাগরকে দেখে যেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ে সংগঠিত এসব গুম, চাঁদাবাজি,অপহরণ দমনে আন্তরিক হলে আমি আমার সন্তানকে বুঁকে ফিরে পেতাম।
এ প্রসঙ্গে মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহনূর আলম জানান, মো. নূরুদ্দীন সাগর অপহরণের মামলায় এখন পর্যন্ত মোবাইলে প্রতারণা করে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রলোভণে টাকা নেওয়ায় ৫ ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু এদের কাছ থেকে অপহৃত সাগরের বিষয়ে কোন তথ্য বা ক্লু পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশ এখনো কাজ করছে।