চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়েও স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। একাধিক ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরাতে জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের তোড়জোড়ও কাজে আসেনি।
উল্টো সমর্থন প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে নালিশ দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারা বলছেন, বিভক্তি জিইয়ে রাখতে তৃণমূলকে পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের মানুষকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
চসিক নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিতদের সাথে আলাপকালে জানা যায় প্রার্থীদের অধিকাংশই ত্যাগী ও পরিক্ষিতদের উপেক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠান শেষে মাহবুবুল আলম হানিফ বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, দলীয় সমর্থনের বাইরে এবং দলীয় পদে আসীন থেকে কেউ বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করলে ভবিষ্যতে তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে দল থেকে বহিষ্কারের কথাও জানান তিনি।
এমন বক্তব্যের পর বিদ্রোহী প্রার্থীরা একযোগে মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তারা।
দলীয় সমর্থন ছাড়াই নগরীর ৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। তিনি বলেন, এখন তো সরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে দলের পাশাপাশি মানুষের সুখে-দুঃখে কাজ করেছি। করোনা সংকটকালীন সময়ে কাজ করে পরিবারসহ আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে দলীয় বিধি না মেনে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হলো। মাহবুব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে আমরা মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন ওবায়দুল কাদেরসহ হাইকমান্ডকে বিষয়টি অবগত করবেন।
এদিকে সমর্থনের ক্ষেত্রে দলীয় বিভক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ৯নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জহিরুল আলম জসিম। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন সভায় যারা ছিলেন তাদেরও ভুল হতে পারে। আমার ওয়ার্ডে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি একসময় কুকুরের গলায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ঝুলিয়েছেন। এখানে একটি পক্ষ দলীয় বিভাজন সৃষ্টি করছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ অনেকে আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের বিরোধিতায় তিনি (নাছির) মেয়র নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। এর সঙ্গে আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যে প্রক্রিয়ায় সমর্থন দেওয়া হয়েছে সেটি সঠিক নয়। এখান থেকে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হলে নেত্রী এবং মনোনয়ন বোর্ড পছন্দ করবেন। কিন্তু এখান থেকে কোনো নাম যায়নি। আমরা বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি।
একই অভিযোগ করেন নগরের ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করা বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সাবের আহমদ। তিনি বলেন, প্রার্থী বাছাই কমিটিতে মহানগরের কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। বাছাই কমিটির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ওয়ার্ড পর্যায়ের কাউকে চেনার কথা নয়। তিনি সমর্থন দিয়ে এমনটা করেছেন। এরপর দলীয় ফোরামে এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। একেবারে দলের বাইরে যাব না। মহানগর নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছি।
অপরদিকে ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাদের পাশ কাটিয়ে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নগরীর ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদের বিদ্রোহী প্রার্থী এইচ এম সোহেল।
তিনি বলেন, এখানকার প্রার্থীরা মন্ত্রী-এমপির আশির্বাদে সমর্থন পেয়েছেন সেটা তো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জানে না। ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো বৈঠক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়াই সমর্থন দেওয়া হলো। কেন্দ্রে কোনো নাম পাঠানো হয়নি। ত্যাগীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশের কারণে এমনটা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে নগরীর ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সাহেদ ইকবাল বাবু ভোটার ও দলীয় চাপে নির্বাচন করছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া নগরীর ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের দলীয় সমর্থনের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন বলেও জানান।
অন্যান্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে নগরীর ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের প্রার্থী তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ও ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরী বলেন এলাকার উন্নয়নের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আমি সম্পৃক্ত থাকায় এলাকাবাসির অনুরোধে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এছাড়া ২৫নং রামপুরা ওয়ার্ডের এস এম এরশাদ উল্লাহ বলেন নির্বাচন করা সবার অধিকার রয়েছে তাই এলাকার সব উন্নয়নে নিজেকে জড়াতে নির্বাচন করছি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি যে নির্দেশনা দিবে সেটি অনুসরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের এ বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেটা ভালো মনে করেছেন, করেছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে নাছির বলেন, মেয়র নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কিছু জায়গায় একাধিক বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। এগুলো নিয়ে কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সামনেও কথা বলবেন। চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দও বৈঠকে বসেছেন। এখনও দিন ফুরিয়ে যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি যত বেশি সংখ্যক প্রার্থীকে নিবৃত্ত করা যায়।