মো. রবিউল হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি):- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্তণালয়াধীন মহিলা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মসূচির আওয়াত “নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী” ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়ে সংবর্ধনা পেয়েছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ঘুরে দাঁড়ানো সফল নারী উদ্যোক্তা মোসা. আমেনা আক্তার।
বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর হতে ১০ ডিসেম্বর) ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও জয়িতাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তাকে এই সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সফল জননী নারী হিসেবে ইন্দিরা দেবী চাকমা, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নিপু ত্রিপুরা, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় নমিতা চাকমা, শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে মাচিচিং মারমাকে জয়িতা হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ক্রইসাঞো চৌধুরী, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, স্বামী পরিত্যাক্তা আমেনা আক্তার জেলার মানিকছড়ির উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ ছদুরখীল এলাকার বাসিন্দা দরিদ্র কৃষক মফিজ মিয়া ও মোর্শেদা বেগমের মেয়ে। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারনে নিজের স্বপ্নগুলোকে বিসর্জন দিয়ে গেলো বছরের শুরুতে কলেজে পড়াবস্থায় পরিবারের ইচ্ছায় বসতে হয়েছে বিয়ের পিঁড়িতে। কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে তাঁর (আমেনা) জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। স্বামীর পরিবারের শারীরিক মানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। শত বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সেখান (ছদুরখীল) থেকেই নিজ উদ্যোগ, বিশাল স্বপ্ন, চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে শুরু করেন ছোট একটি ব্যবসা। ফেসবুক পেইজ ‘বাঙ্গালীয়া’র মাধ্যমে নিজের তৈরী আচারসহ বিভিন্ন পণ্য অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দিতে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। “নিজে বলার মতো একটি গল্প” ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহারের সহযোগিতা এবং উপজেলা তথ্য অফিস ও ইউএনও তামান্না মাহমুদের পরামর্শে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি। দীর্ঘ ১ বছর চেষ্টা আর পরিশ্রমে ফলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন নিজেকে। বর্তমানে সুনামের সহিত তাঁর পণ্য (সিজনাল আচার, বালাচাও, হলুদের গুড়ো, হলুদের শুট) ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর পাশাপাশি পার্সেলের মাধ্যমে বিদেশেও পাঠিয়ে থাকেন তিনি। এতে যেমন নিজে স্বাভলম্বী হয়েছেন। চালাতে পারছেন নিজের পড়াশোনার খরচ।
এই বিষয়ে আমেনা আক্তার জানান, আমার দীর্ঘদিনের চেষ্টা আর পরিশ্রম আমাকে আজ সফলতার কাছে নিয়ে এসেছে। জয়িতা সম্মাননাও পেয়েছি। তারপরও প্রতিনিয়ত অনেক প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়। সরকারি সহায়তা পেলে আরো ভালো কিছু করতে পারবো। এসময় তিনি সমাজের অবহেলিত নারীদের ঘরে বসে না থেকে আত্মকর্মসংস্থার সৃষ্টির মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন।