গুইমারা,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
পাহাড়ে প্রথম ডিজিটাল লাইব্রেরি ম্রাংমুংতং ডিজিটাল লাইব্রেরি যা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা গুইমারা উপজেলায় বথিবাং তংজইয়ে অবস্থিত। জ্ঞান পিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলায় এলাকার তরুণ প্রজন্মের লক্ষ্য। এখানে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
চীনা দার্শনিকে এক প্রবাদ রয়েছে- তুমি যদি এক বছরের পরিকল্পনা করো তাহলে শস্য রোপণ কর, তুমি যদি দশ বছরের পরিকল্পনা কর তাহলে গাছ লাগাও, আর যদি হাজার বছরের চিন্তা করো তাহলে মানুষ তৈরি করো। সময়ের প্রয়োজনে ১৪ই মার্চ ২০১৮ সালে একদল তারুণ্য পাড়ায় একটি পাঠাগার প্রয়োজনীয়তা অনুভবে গুইমারা উপজেলা বথিবাং তংজইয়ে একটি গতানুগতিক লক্ষ্য রেখে সম্মিলিত প্রয়াসে একটি ম্রাংমুংতং ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হয়। ম্রাংমুংতং মারমা ভাষায় রাখা হয়েছে আরো যদি বিশ্লেষণ করে দেখায় তাহলে মারমা ভাষায় সম্পূর্ণ অর্থ বহে বাংলায় রূপ সর্বোচ্চ শিখর। মানে একটি জাতিকে সর্বোচ্চ শিখরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য এই তারুণ্যই।
ডিজিটাল লাইব্রেরি গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ম্রাংমুংতং এগিয়ে পথচলায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পক্ষ থেকে দুটি বুকসেল এবং গুইমারা উপজেলা প্রশাসন থেকে কম্পিউটার, প্রিন্টার, টিভি স্মার্ট ও মোডেম ইত্যাদি সহযোগিতা করা হয়েছে যা লাইব্রেরিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। রয়েছে দেড় হাজারো অধিক ই-বুক এর ৩০০ খানেক শিশুতোষ, কিশোর, উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন, বিভিন্ন সাহিত্য এবং ইতিহাস বিষয়ক রয়েছে। তবে ই-বুক এর তুলনায় পাঠাগারে বিভিন্ন লেখকের বই নেই বললেই চলে। ই-বুকের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই রাখাও প্রয়োজন।
জেমস রাসেল বলেছেন- বই হলো এমন এক মৌমাছি যা অন্যদের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নিয়ে আসে। বিশ্বের সাথে যদি আমরা বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে আমরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশের সরকার একসময় চিন্তা খোরাকে বিশ্বের সাথে গতানুগতিক প্রয়োজনে ২০১৭ সালে ৩০শে অক্টোবর এক মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তে ৫ই ফেব্রুয়ারীকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারের চাহিদা বেড়ে যায়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে চাহিদা কদর ছেয়েছে। এর আগেও নিজ নিজ উদ্যোগে গ্রাম ও ক্লাবে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছে।
লাইব্রেরি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা যদি ধরে নিই তাহলে এই সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিতরণ করা যেতে পারে। যা নতুন প্রজন্মের মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য একটি সামাজিক ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরতে পারি। সামাজিক পরিবর্তনের শিক্ষা, রুচিবোধ ও সংস্কৃতির কালানুক্রমিক নিবিড় সম্পর্ক রাখতে পারবে। সমাজের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের একটি শিক্ষা বান্ধব হিসেবে সমাজের ভূমিকা রাখবে।
ম্রাংমুংতং ডিজিটাল লাইব্রেরি সাথে পাড়ায় একটি ক্লাব সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে যুব সমাজের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। সিনিয়র এএসপি থোয়াইঅংপ্রু মারমা এই লাইব্রেরি জন্য সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এবং সমাজের আরো বড়ো ভূমিকা হিসেবে রেখেছেন জ্ঞানচর্চা নির্দিষ্ট স্থান বসার লক্ষ্য ভূমি দান করেছেন বগ্রী মারমা। পাঠাগার ১৭ জন বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল এর প্রগতিশীল ছাত্র নেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি চাইথোয়াই মারমাকে রাখা হয়েছে।
পাঠাগার অনেক অপূরণ রয়েছে একটি স্থায়ীত্ব টিকে রাখার জন্য চাই একটি পাকা ভবন। পাঠাগারে শিশুতোষ বই থেকে শুরু করে বড়দের পর্যন্ত বিভিন্ন পাঠ্যবই প্রয়োজন। উপযুক্ত বসার জায়গা নেই চেয়ার ও টেবিল এবং আনুষাঙ্গিক উপকরণ প্রয়োজন। আমাদের সমাজের অনেক সমাজকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, শিক্ষানুরাগী রয়েছেন তারা চাইলে এই ডিজিটাল লাইব্রেরি জন্য সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন।
সভ্যতার রক্ষাকবচ হিসেবে মানবসমাজের ভূমিকা রাখুক এই কামনা করছি। গ্রামে গ্রামে পাঠাগার আন্দোলন গড়ে উঠুক, সমাজ পরিবর্তনে হাতিয়ার হিসেবে জাতির ভূমিকায় সমাজের নিয়োজিত থাকুক। আসুন আমরা সকলে সম্মিলিত প্রয়াসে একে অপরের সহযোগিতা করি। মানুষকে জ্ঞানের ভান্ডারে গ্রন্থাগারমুখী করি।