নিউটন চাকমা, কা্উখালীঃ
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তফশীল মোতাবেক আসছে আগামী ১১ ও ২৮ নভেম্বর দেশের সবক’টি ইউনিয়ন পরিষদের ২য় ও ৩য় ধাপে নির্বাচন কমিশন(ইসি) কর্তৃক তফশীল ঘোষণা অনুযায়ী ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হবে। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে এবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে তুমুল হাড্ডা-হাড্ডির লড়াইয়ের হবে বলে সুশীল সমাজের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
২৯ অক্টোবর কাউখালী, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি উপজেলাধীন বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে জানাগেছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের মতো জাতীয় দলের প্রতীক নিয়ে মনোনয়নের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের প্রতীক বরাদ্ধ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দল কর্তৃক উম্মুক্ত করায় বিগত বছরের তুলনায় এবছরে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে হাড্ড-হাড্ডির লড়াই প্রতিফলন ঘটবে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের বিত্তশালীরা অভিমত মন্তব্য করেছেন। আবার দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহনের ফলে একদিকে দলীয় অর্ন্তকোন্দলে রূপ নিয়েছে অন্যদিকে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
কাউখালী উপজেলাধীন ঘাগড়া এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোটার (জনসাধারণ) বলেছেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে সব দলের কর্মীদের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব ছিল না। এখন যেহারে আপন ভাই-বোন, বাবা-মা, আত্নীয় স্বজন ঘনিষ্ঠতম বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে চিরস্থায়ী ফাটল, মনমালিন্য, বিবেদ, সংঘাত সবই দেখা দিয়েছে। কেননা, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দেয়ায় এই অবস্থা অবনতি হচ্ছে, হবে বলে এ প্রতিবেদকের নিকট তুলে ধরেন। সামনে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, চা পার্টির আয়োজন, ঘরোয়া পরিবেশে মিটিঙ, সভা সমাবেশ ইত্যাদি। মুলত দেশে নির্বাচন এলেই এই রকম পরিবেশ সেমিনার, রাস্তাঘাটে কোলাকুলি, খবর নেয়াসহ নানা ধরনের প্রলোভন আচার ব্যবহার নমনীয়তার ভাব পোষণ করে থাকেন নির্বাচনে প্রার্থীরাই। নির্বাচন শেষ তো সাক্ষাত, কথাবার্তা, কোলাকুলি, মমত্ববোধ টুকু দেখা মেলেনা বলে জানান এ প্রতিবেদককে।
তারা আরো বলেন, বিগত বছরের ইউনিয়ন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। যে যার দল নিয়ে কাজ করছে, সে সেই দলেরই প্রাধান্য দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ভাই-বোনের, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে কোন সম্পর্ক ঠিকে থাকবে না। কাজেই এই ধরনের নির্বাচন কোন দিনই গ্রহণযোগ্যতা পায় না। যেমনটি গত কিছুদিন আগে কাপ্তাই ঘটনা উদাহরন দিয়ে বলেন, কাপ্তাই উপজেলাধীন ১৬অক্টোবর মধ্যরাতে চিৎমরম ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নেথোয়াই মার্মা ও ২৬ অক্টোবর কাপ্তাই ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এগুলো তো জ্বলন্ত প্রমাণ। অথচ চেয়ারম্যান মনোনীত প্রার্থী নেথোয়াই মার্মাকে হত্যার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করা হয়েছিল। অতএব তাদের অর্ন্তকোন্দলে তাদের প্রার্থী নেথোয়াইকে তার দলের প্রতিপক্ষের লোকেরা হত্যার মূলহোতা বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুতরাং সরকারকে এই ধরনের মনোভাব পরিহার করে দলের প্রতীক বরাদ্ধ বন্ধ করে উম্মুক্ত সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করার অনুরোধ জানান।
অন্যদিকে কাপ্তাই ও বিলাইছড়িবাসীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলাধীন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠন নৌকার প্রতীক নিয়ে মধ্যে অর্ন্তকোন্দল রয়েছে তা ক্ষণিকের জন্য। আশার আলো যে কাপ্তাই সবক’টি ইউনিয়ন রয়েছে সব ইউপি নির্বাচনে জয়ের আশারবাণী জানান উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা। তবে কাপ্তাই উপজেলার অধিকাংশ আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ও আখ্যায়িত বলা চলে।
অপরদিকে বিলাইছড়িতে ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আশংকা করা হচ্ছে। বর্তমানে এলাকায় নির্বাচনীর হাওয়া সরগরম চলছে। এই এলাকাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(জেএসএস) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও অনেকের ধারণা। তবে এখনো পযর্ন্ত কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনার মত বিরোধ দেখা দেয়নি। এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্বক সদা প্রস্তুত রয়েছেন বলে সুত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬অক্টোবর মধ্যরাতে চিৎমরম ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নেথোয়াই মার্মাকে কে বা কারা গুলি করে হত্যা করেছে তা এখনো সুরহাত হয়নি। এজন্য এই ইউনিয়নে ২য় ধাপের নির্বাচনের আমেজ থাকলে তা নির্বাচন কমিশন স্থগিত করেই আগামী ৩য় ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হবে।
আগামী ১১ ও ২৮নভেম্বর ২য় এবং ৩য় ধাপে নির্বাচন কমিশন তফশীল ঘোষণা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সারাদেশ ব্যাপী একযোগে অনুষ্টিত হবে। রাঙামাটিতে ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে। তবে কিছু কিছু ইউনিয়নে আঞ্চলিক দলের ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(গণতান্ত্রিক ও প্রসিত গ্রুপ সমর্থিত) স্বতন্ত্র সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানাগেছে। দেশের ইউপি নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনসহ যেকোন নির্বাচন এলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন দল, প্রধান বিরোধীদল, আঞ্চলিক রাজনৈতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি দলের মধ্যে ত্রিমূখী নির্বাচনে পরিণত হয়ে তুমুল হাড্ডা-হাড্ডির লড়াই চলে। যে যার মতো প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রয়োগে মেতে উঠে। নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমানে কয়েকটি এলাকায় নির্বাচনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেজন্য সকল ধরনের বিশৃঙ্খলা, আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ সংঘাত ঘটানোর আগ মুহুর্ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সজাগ থাকার পরামর্শের অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার সুশীল সমাজের সচেতন মহল।