করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চলনবিল, হালতিবিল, মাধবকুন্ড,রাঙ্গামাটি,সাজেক লাউয়াছড়া, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, জাফলং, টাঙুয়ার হাওর, হাকালুকির হাওর ও সবুজ চা বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্র সর্বত্র ফিরে এসেছে প্রাণ চাঞ্চল্য।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। করোনা আতঙ্কে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার ফলে এক ধরনের অবসাদ মানুষকে ঘিরে ধরেছে। বিশেষ করে শিশুরা ঘরবন্দি থেকে অনেকটা বিমর্ষ। এর থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ছুটছে সমুদ্র কিংবা পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতির কাছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। সেই সাথে দেখা গেছে জীবন জীবিকার সংস্থান বাড়তে দেখা যাচ্ছে ।
করোনা মহামারির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল পর্যটন শিল্প। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়- এ খাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪০ লাখ জনবল বেকার হয়ে পড়েছিল। পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় আবার সবাই কর্মচঞ্চল হয়ে পড়েছে। ফলে পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। খুব দ্রত পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ।
প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ধীরগতিতে হলেও এ শিল্পের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার কারণে পর্যটন শিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপেটেটিভনেস রিপোর্ট-এ বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম বলা হয়েছে।
একটি সূত্রে জানাগেছে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ ধাপ এগিয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ১২৫ তম।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের মূল উপাদান হতে পারে এই দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ। পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র, বনাঞ্চল, হাওরসহ বৈচিত্র্যের সম্ভার আমাদের এই দেশ। এই সম্পদগুলোকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা গেলে এই দেশে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের বর্তমান ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজতর করতে হবে। আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরের কর্মকান্ডকে আরও পর্যটক বান্ধব করতে হবে।
আমাদের দেশে পর্যাটন খাত পিছিয়ে থাকলেও, বর্তমানে আরও মনোযোগ দিতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে এই শিল্পে আরও উন্নতি করতে পারবে। করোনাকালীন ক্ষতিও সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে।
দির্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার স্বরূপে ফিরছে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের অর্থনীতি, ১৭ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার পর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছেন কক্সবাজারে। করোনার কারণে দীর্ঘ পাঁচমাস ঘরবন্দি থাকার পর মানুষ ভ্রমণ করছেন পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে। ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শ্রেণি পেশা নির্বিশেষে সকলেই কক্সবাজার ভ্রমণ করে ক্লান্তি ও অবসাদ কাটানোর চেষ্টা করছেন। গতকাল পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কলাতলীর ডলফিন মোড়, লাবনী পয়েন্ট, সীইন পয়েন্টসহ সৈকত এলাকা ও হোটেল মোটেল জোনে পর্যটকদের পদচারণা। খবর নিয়ে জানা গেছে, হিমছড়ি ইনানী বিনোদন কেন্দ্রও সরব হয়েছে পর্যটকে। এদিকে করোনা সচেতনতায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার নির্দেশনা থাকলেও কিছু কিছু ভ্রমণকারী এবং ব্যবসায়ী তাতে এখনো কিছুটা অসচেতন দেখা গেছে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসন সচেতন রয়েছেন।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রমতে, কক্সবাজার শহরের সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল, ১৪০ টিরও অধিক রেস্টুরেন্ট, ২ শতাধিক ট্যুর অপারেটর অফিসসহ পর্যটন শিল্পনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সচল হয়েছে। এর সাথে অর্ধশত পরিবহন সংস্থা ও বিমান পর্যটক পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসছেন পর্যটকরা। এখন উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ সৈকত, হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এতে আবারো চাঙ্গ হয়ে উঠছে কক্সবাজারের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি।
কক্সবাজার হোটেল ও রাঙ্গামাটি মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ মাস ব্যবসা বন্ধ থাকার কারণে বিপুল লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন বিধি-নিষেধ সহকারে হলেও পর্যটন শিল্প খুলে দেয়ায় তারা আনন্দিত। দেশের পর্যটন অর্থনীতি আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্ধ লাখ শ্রমিক কর্মচারীর ঘরে আনন্দ ফিরে এসেছে।