মহালছড়িতে সকল ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। “ইউনিয়ন পরিষদ” হলো গ্রামের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছের তথ্যসেবা প্রদান প্রতিষ্ঠান। ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের গ্রাম্য আদালত। দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। কিন্তু মহালছড়ি উপজেলার ৪টি ইউনিয়ের কোনটিতেই নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হয় নি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক জাতীয় সনদ বা পরিচয়পত্র, জন্ম-মৃত্যু সনদ, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং কর দেয়া সহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্যে প্রয়োজনে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ সকল ধরনের মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ সেবা গ্রহণে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। এ জন্য বলা হয়ে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ হলো স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান।
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় ১নং সদর ইউনিয়ন, ২নং মুবাছড়ি ইউনিয়ন, ৩নং ক্যায়াংঘাট ইউনিয়ন, ৪নং মাইসছড়ি ইউনিয়ন, ৫নং সিন্দুকছড়ি সহ ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ছিলো। বর্তমান বাংলাদেশ আ’লীগ সরকার খাগড়াছড়ি জেলায় নতুন করে জনগণকে বিভিন্ন তথ্যাদিসহ ভালো সুযোগ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে মহালছড়ি উপজেলা হতে ৫নং সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন কে গুইমারা উপজেলার অন্তভুক্ত ইউনিয়ন ঘোষণা করে। ফলে মহালছড়ি ৪ টি ইউনিয়ন পরিষদ দিয়ে উপজেলা পরিচালিত হচ্ছে। মহালছড়ি উপজেলায় ৪ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যেও বর্তমান বাংলাদেশ আ’লীগ সরকার ঘোষিত আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদের নতুন কমপ্লেক্স ভবন একটিও তৈরি হয়নি। সম্প্রতি মহালছড়ি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ভবন পরিদর্শনে গিয়ে দেখলাম যে প্রত্যেক দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত তথ্যসেবা ভালো হলেও প্রত্যেক ভবনের অবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদের কাঠামোগত টিনশেড ভবনের অবস্থা বেহাল। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মাথার উপরে দীর্ঘদিনের আগের তৈরি করা কাঠের সাথে টিনশেড ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে পরিষদের সচিব-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিগণ।
এ বিষয়ে মহালছড়ি ১নং সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল জানান, বর্তমানে এ ইউনিয়ন পরিষদটি সদর ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্যে অস্থায়ীভাবে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গার ওপরে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মহালছড়ি সদর ইউনিয়নের অন্য কোন ওয়ার্ডে উপযুক্ত কোন জমি না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের জন্য প্রক্রিয়াগত আবেদন করা হচ্ছে না। যদি উপজেলা পরিষদ কর্তৃক এই জায়গাটি ইউনিয়ন পরিষদকে দিয়ে দেয় তাহলে নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ বিষয় নিয়ে প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম নিয়ে আগানো যাবে। তবে আমরা জায়গা খোজা হচ্ছে, উপযুক্ত জায়গা পেলেই নতুন ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ হতে জানা যায় যে এই জায়গা দেয়ার তাদের নিজস্ব কোন এখতিয়ার নাই।
২নং মুবাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাপ্পী খীসা বলেন যে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থান সনাক্তকরন করে, ৮নং ওয়ার্ডে অধিগ্রহণ ও মাটি পরীক্ষা করে নতুন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের চাহিদাপত্র উপজেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
৩নং ক্যায়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চাকমা বলেন যে,আমার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। এ এলাকায় বিদ্যুৎ নাই, বর্তমানে এ পরিত্যক্ত ইউনিয়ন পরিষদে অনেক বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না এবং কোন জাতীয় দিবসে বা কোন কর্মসূচিতে জাতীয় পতাকা তোলা যাচ্ছে না। তবে মাইসছড়ি বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে জায়গা সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়াধীন নিয়মকানুন রয়েছে তা নিষ্পত্তি হলেই দ্রুত এ এলাকায় নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের কাঠামোগত ভবন তৈরির বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
ক্যায়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের বিষয়ে ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন এ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ৩নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। এ জায়গাতে নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স তৈরি করা হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে।
৪নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাজাই মারমা বলেন যে, বর্তমানে এ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। এ ভবনের অবস্থা আরো খুবই খারাপ। তবে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থান সনাক্তকরন করে, মাটি পরীক্ষা করে নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের ভবন তৈরির উপজেলা প্রশাসনে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মহালছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী জানান যে, উপজেলা প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক হতে প্রয়োজনীয় যথাযথ নিয়মকানুন শেষ করে স্থানীয় সরকার লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট( LGED) হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ সম্পর্কিত বাজেট পাশ হয়ে মহালছড়ি প্রকৌশলী অফিসে দরপত্র আহ্বান শেষে মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ অনুয়ায়ী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স তৈরির কার্যকম শুরু করা যাবে।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবাইদা আক্তার বলেন, ৪নং মাইসছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জায়গা পাওয়া গেছে। তা জেলা প্রশাসক বরাবর ফাইল পাঠানো হবে। আশা করছি অচিরে এ ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্স ভবন দ্রুত নির্মিত হবে। ২নং মুবাছড়ি ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডে জায়গা পেয়েছি। ভূমিকর্তা কর্তৃক মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তিনি এও আশা করছেন যে অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানদের যথাযথ সহায়তায় জায়গা পেলেই পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়ন পরিষদে কমপ্লেক্স নির্মাণকরণের এর মধ্যে অন্যান্য ইউনিয়নে পরিষদ ভবন নির্মাণের চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হবে।
তাই বিভিন্ন এলাকার ইউনিয়নবাসীরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য/সদস্যাগণ আশা করছেন যে অচিরেই বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত পদক্ষেপে ডিজিটাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন ইউনিয়ন ভবন কমপ্লেক্স নির্মিত হবে।