নতুন কোনো সিম বিক্রি করতে পারবে না গ্রামীণফোন।বুধবার অপারেটরটিকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। চিঠিতে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত অপারেটরটিকে সিম বিক্রি বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইস্যুতে এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।’
তিনি বলেন ’গ্রামীণফোন যদি কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইমপ্রুভ না করে তাহলে কোনো অবস্থাতেই তাদের সিম বিক্রি করতে দেবো না। আরও বাকিগুলো কী আছে সেটা দেখা যাবে।’সিম বিক্রির এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে গ্রামীণফোনের করণীয় কী এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইমপ্রুভ করতে হবে। তারা যদি এক সপ্তাহ পরে এসে বলে তারা কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইমপ্রুভ করেছে তাহলে বিটিআরসি সে প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে দেখবে কোথায় কীভাবে তারা এই উন্নয়ন করেছে। তারা সত্যিই কোয়ালিটি অব সার্ভিস ঠিক করলে তখন সিম বিক্রিরও অনুমতি পাবে।’বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র জানান, ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইস্যুতে গ্রামীণফোনকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’সিম বিক্রি বন্ধের এই নির্দেশনার আগে ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ ইস্যুতে অপারেটরটি কোনো কারণ দর্শানো বা কথা বলার সুযোগ বা কোনা চিঠি পেয়েছিলো কিনা এমন প্রশ্নে ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, ‘না, কোনো কিছু নয়। আমরা তাদের বারবার বলে আসছি, গ্রাহকদের অভিযোগ আসছে, তারা কোনো কিছু করেনি তাই শেষ পর্যন্ত আমরা এদিকে গেলাম।’এই নিষেধাজ্ঞা হতে অপারেটরটির বের হওয়ার কোনো পথ আছে কিনা এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন ‘এখন মূল কথা কোয়ালিটি অব সার্ভিস, গ্রাহক সাফার করছে। তারা কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইমপ্রুভ করলে তারপর বিষয়টি আমরা আমলে নেবো।
‘আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশার জানান, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিকম ব্র্যান্ড গ্রামীণফোন বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইটিইউ’র সেবার মানদণ্ড অনুসরণ করার পাশাপাশি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানদন্ড থেকেও এগিয়ে আছে। ধারাবাহিকভাবে নেটওয়ার্ক ও সেবার মানোন্নয়নে আমরা বিটিআরসি’র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি এবং নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া নিলামেও গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ অনুমোদিত তরঙ্গ অধিগ্রহণ করেছে । ‘‘এমতাবস্থায়, অপ্রত্যাশিত এ চিঠি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি। আমরা মনে করি, আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে গঠনমূলক আলোচনাই হবে এ সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় ’ উল্লেখ করেন তিনি।গ্রামীণফোনের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার।গ্রামীণফোনের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইস্যুতে বিটিআরসির সাম্প্রতিক ড্রাইভ টেস্টে গ্রামীণফোনের ফোরজি সেবার মান উন্নতির দিকে ছিলো। ঢাকা বিভাগে গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে অপারেটরটির ফোরজি গতি ছিলো ৬ দশমিক ৯৯ এমবিপিএস। দেশের ছয়টি বিভাগে অপারেটরটির ফোরজির এই গড় গতি ছিলো প্রায় ৫ দশমিক ২৪ এমবিপিএস।এরপর বিটিআরসির ড্রাইভ টেস্টের পর এসব কাভারেজ এলাকায় নেটওয়ার্কের মান বাড়াতে কাজ শুরু করেছে গ্রামীণফোন, বলছিলেন তারা।এতে নতুন বছরের শুরুর দিকে বরিশাল বিভাগে ফোরজি এফটিপি ডিএল পরীক্ষার পর ডেটার গতি ৮ দশমিক ৪৮ এমবিপিএস মিলেছে। গ্রামীণফোন গ্রাহকদের ফোরজি নেটওয়ার্কের উন্নত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের পরীক্ষা দেশজুড়ে পরিচালনা এবং এ প্রচেষ্টা চলমানও রাখছিলো।তারা বলছেন, ‘গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের যাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। সর্বস্তরের মানুষের জীবনে ডিজিটালাইজেশনের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতে তাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। বাংলাদেশের ৫০ বর্ষপূর্তি উদযাপনকালে গ্রামীণফোনের সব টাওয়ার ফোরজিতে আপগ্রেড করা হয়েছে।’
এই কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামীণফোন মোবাইল সেবা প্রদানে অন্যান্য নির্ভরশীল ইকোসিস্টেম পার্টনারদের সেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে চলেছে এবং পাশাপাশি ভবিষ্যৎ উপযোগী নেটওয়ার্ক সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে মাঠ পর্যায় থেকে সেবার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে ।সম্প্রতি ফোরজি সেবা সম্প্রসারণ ও মানের বিষয়ে শর্ত পূরণ করায় গ্রামীণফোনের ফোরজি লাইসেন্সের পারফর্ম্যান্স ব্যাংক গ্যারান্টির তৃতীয় পর্যায়ের ৫০ কোটি টাকাও ছাড় করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, জানান ওই কর্মকর্তারা।