মোঃ সিরাজুল মনির
ব্যুরো প্রধান চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনার লক্ষ্য নিয়ে গৃহীত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সাত একরসহ ১২ একর বাড়তি ভূমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান বিমানবন্দর সড়কের এই অংশটিতে হাত না লাগিয়ে এক পাশে ত্রিশ ফুট সরিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নতুন এ্যালাইনমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনায় সাড়া দিয়ে সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ভূমির মূল্য হিসেবে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এতে বন্দর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি ও অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ বাবদ নতুন করে চারশ’ কোটি টাকার বেশি খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৬ কিলোমিটার লম্বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশটির ঝুলে থাকা কাজ অচিরে শুরু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি স্বপ্নের প্রকল্প হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শহরের যে কোনো অঞ্চল থেকে আধ ঘণ্টারও কম সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চারটি পৃথক ধাপে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। তৈরি হয়েছে পিলার। পিলারের উপর গার্ডার বসানোর কাজও চলছে। সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায়ও শুরু হয় পাইলিংসহ পিলার তৈরির কাজ। কিন্তু সল্টগোলা থেকে পরবর্তী অংশের কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যমান সড়কের উপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ফ্লাইওভার নির্মাণের ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আপত্তি তোলে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের আপত্তির কারণ হিসেবে জানায় – বিমানবন্দর সড়কের এই অংশটিতে বিদ্যমান সড়কের উপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে বন্দরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। আইএসপিএস কোড অনুযায়ী বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। ফ্লাইওভার থেকে যাতে বন্দরের ভিতরে কিছু থ্রো করা না যায় বা দেখা না যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও বন্দর কর্তৃপক্ষ সিডিএ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে। বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণগুলো সামনে রেখে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে বারিক বিল্ডং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিদ্যমান রাস্তার উপর নির্মাণ না করে পাশ দিয়ে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রাস্তার ত্রিশ ফুট বাইরের অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাত একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন পাঁচ একর মিলে মোট ১২ একর জায়গা হুকুম দখল করতে হচ্ছে। এই ভূমিতে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনসহ নানা ধরনের অবকাঠামো রয়েছে। এগুলোর ক্ষতিপূরণও প্রদান করতে হবে। সাত একর ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি এবং ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় হবে আরো প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। এতে করে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় নতুন ডিজাইনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য চারশ’ কোটিরও বেশি টাকা বাড়তি খরচ করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭ একর ভূমির মাঝে নব্বই শতাংশই বন্দর কর্তপক্ষের কাজে ব্যবহৃত কিংবা খালি রয়েছে। বাকি দশ শতাংশ ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া। এই ইজারা বাতিল করে ভূমির দখল নিতে হবে। তবে ব্যক্তি ইজারা গ্রহীতাদের অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিংয়ের দিকে যেতে রাস্তার ডানপাশে বিদ্যমান ফুটপাত থেকে ৩০ ফুট জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হবে পিলার। চার লেনের ৫৪ ফুট ফ্লাইওভারের অর্ধেক থাকবে বিদ্যমান ফুটপাত এবং রাস্তার একাংশের উপর। বাকিটা চলে যাবে ফুটপাতের বাইরে। এতে নিচের বিদ্যমান সড়ক আরো দুই লেন বৃদ্ধি পাবে। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পশ্চিমে নিমতলা মোড়ের দিকে ডান পাশের বহুতল ভবনগুলোর বেশ কিছু অংশও ভাঙা পড়বে। ভাঙা পড়বে বন্দর এবং কাস্টমস ভবনের দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থাপনার নানা অংশও।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নতুন ডিজাইন করা হচ্ছে। পরিবর্তিত ডিজাইন এবং খরচ বৃদ্ধির ব্যাপারটি আবারো একনেকে তোলা হবে। একনেক থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার পরই বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। তবে খুব দ্রুত বিষয়টির সুরাহা করার উপর গুরুত্বারোপ করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। দ্রুত আমাদেরকে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং ব্লকের কাজ ধরতে হবে। এ্যালাইমেন্টের বিষয়টি চূড়ান্ত না হলে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি গত ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সিডিএর প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান।