মো. রবিউল হোসেন, মানিকছড়ি:- দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র (রুই জাতীয়) হালদা নদী। প্রজনন মৌসমে রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশসহ মিঠা পানির সকল মাছ ডিম দিতে অতিথি পাখির ন্যায় হালদা নদীতে এসে ভীড় জমায়! হালদার পানি প্রজননের জন্য অধিক নিরাপদ বিধায় মৎস্য উৎপাদনে হালদা দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র এবং পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার ভাটার নদী! কিন্তু হালদার গুরুত্ব এখনও হালদাপাড়ের মানুষের কাছে অজানা! ফলে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অংশীদারদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার আয়োজন করেছে হালদার উজান খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা মৎস্য বিভাগ।
সোমবার (৩ মার্চ) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিশ্বের একমাত্র জোয়ার ভাটা ও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র নদী হালদা। এই নদীর চরে তামাক চাষ, অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন, অবাধে পাহাড় কাটা ও বৃক্ষ নিধনের ফলে জাতীয় ঐতিহ্য (হেরিটেজ) হালদাকে ইতোমধ্যে আইসিইউতে পাঠিয়েছি আমরা! আইসিইউ থেকে তাকে অবশ্যই বাঁচতে হবে, হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। হালদা থেকে বালি উত্তোলন, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। তামাক চাষিরা বিকল্প চাষাবাদে সম্পৃক্ত হলে সরকারি প্রণোদনায় তারা অগ্রাধিকার পাবে’।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হালদা প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল, অংশীজন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান, উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. এনামুল হক এনাম, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মো. মনিরুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো.মোশাররফ হোসেন, উপজেলা নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি এস.এম.জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক প্রতিনিধি আবদুল মান্নান, তামাক চাষি মো. কামাল হোসেন, মো. এরশাদ, মো. হান্নান মিয়া ও মৎস্য চাষি মো. ফোরকান আলী প্রমূখ।
সমাপনী বক্তব্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদ বলেন, ‘হালদা আমাদের জন্য প্রকৃতির নিয়ামত। এই নদী বিশ্বে নেই! এই নদীর মৎস্য পোনা লাখ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এর ফলে দেশে মাছের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্ব ভুমিকা রাখছে হালদা নদী। হালদার ওপর মানবসৃষ্ট দুর্বৃত্তায়ণে আজ এই হেরিটেজকে আমরাই আইসিইউতে পাঠিয়েছি! এ থেকে উত্তরণের জন্য হালদার উজানে নদীর দুপাড়ে তামাকের বিকল্প চাষাবাদ ও সচেতনতার বিকল্প নেই’।
পরে হালদার উজান মানিকছড়ির ঘোরখানা, ছদুরখীল, আছাদতলী ও যোগ্যাছোলা অংশে তামাক চাষ ও বালু উত্তোলনসহ মানবসৃষ্ট দুর্বৃত্তায়ণ ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এলাকা পরিদর্শন করেন হালদা প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।