চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলার খরনদ্বীপ মুন্সিপাড়া ওয়াহেদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান শায়খুল হাদীস ও মুহতামিম আল্লামা মুফতি ফজলুল্লাহ রহঃ ইন্তেকাল ফরমায়েছেন।
মঙ্গলবার (২১নভেম্বর) নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
রাতে জামেয়া ওয়াহেদিয়া আজিজুল মাদ্রাসার মাঠে মরহুমের নামাজে জানাযা শেষে মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় হাদীস বিশারদ ছিলেন এবং তিনি ভারত উপমহাদেশের আল্লামা ইদরীস কান্দলভী রহঃ, আল্লামা রাসুল খাঁ রহঃ,আল্লামা জামিল আহমদ থানভী রাহিমাহুমুল্লাহ ও আল্লামা আমির হোসাইন রহঃ এর মত প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ ইসলামিক ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ছাত্র।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা মুফতি আজিজুল হক রহঃ এর বোনের ছেলে হন তিনি,সেই সুবাধে চট্টগ্রামের জামিয়া পটিয়াতে ইবতেদায়ী থেকে দাওরা হাদীস পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সহিত পড়েন।উপমহাদেশের প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ এর বিশিষ্ট ছাত্র জামিয়া পটিয়ার তৎকালিন শায়খুল হাদীস আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদীস নামে খ্যাত আল্লামা আমির হোসাইন রহঃ এর থেকে হাদীসের এজাজত প্রাপ্ত হন৷এরপর দ্বিতীয় বার দাওরা পড়েন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান “জামে’আ আশরাফিয়া লাহুরে“। সেখানে সহীহ বুখারি পড়েন আল্লামা কাশ্মীরী রাহিমাহুল্লাহ-র বিশিষ্ট ছাত্র শাইখুত তাফসীর আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী রাহিমাহুল্লাহ-র নিকট। জামে’ তিরমিযী প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড পড়েন আল্লামা রাসূল খান রহঃ এবং খলিফায়ে থানভী আল্লামা জামীল আহমদ থানভী রাহিমাহুমাল্লাহ-র নিকট আবু দাউদ শরীফ পড়েন। আল্লামা আব্দুর রহমান কামেলপুরী থেকে মুসলিম শরীফ পড়েন, তৎকালীন লাহোর জামিয়ার মহাপরিচালক ও থানভী রহঃ এর সুযোগ্য ছাত্র আল্লামা ওবাইদুল্লাহ লাহোরী রহঃ এর নিকট আবু দাউদ পড়েন৷
এরপর এক বছর উক্ত প্রতিষ্ঠানে’এ ফুনুনাত ও ফালসাফা নিয়ে তাখাসসুস করেন।
তিনি নগরীর দারুল মারিফ আল ইসলামিয়ার সাবেক শাইখুল হাদীস ছিলেন৷ হযরত ফজলুল্লাহ রহঃ বিশিষ্ট বুজুর্গানে দ্বীন আল্লামা আলী আহমদ বোয়ালভী রহঃ এর নিকট তাযকিয়ায়ে নাফসের মেহনত করে খেলাফত পেয়ে ধন্য হন।তিনি বোয়ালভী সাহেব রহঃ এর জীবিত কয়েকজন খলীফার মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
তিনি হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আগের কমিটিতে নায়েবে আমীর এবং নবনির্বাচিত কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।
জানাযায় হেফাজত ইসলামের আমির ও জামেয়া বাবুনগরের মহাপরিচালক মাওলানা হাফেজ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী,হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতি ও মুহাদ্দিস মাওলানা জসিম উদ্দিন,আল জামেয়া জিরি মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা খোবাইব বিন তৈয়ব সাহেবসহ দেশের বরণ্য ওলামাগণ।
উপস্থিত ছিলেন বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নানান শ্রেণী-পেশার মানুষ,ও ভক্ত অনুরাগীসহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিগণ জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
জানাযা শেষে মরহুম আল্লামা মুফতি ফজলুল্লাহর জৈষ্ঠ সন্তান মাওলানা আরিফুল্লাহকে মজলিশে শুরার জরুরি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জামেয়া আজিজুল উলুম ওয়াহেদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম নিযুক্ত করেন।
তিনি ২ছেলে,৮মেয়েসহ অসংখ্য অনুরাগী,ছাত্র,ভক্ত, মুরিদান রেখে যান।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ৭আসনের সংসদ সদস্য,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক,তথ্যমন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদ, জাতীয় সংসদের হুইপ পটিয়া আসনের সাংসদ শামসুল হক,সাতকানিয়া -লোহাগড়া আসনের সাংসদ প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী,বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল,সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শীর্ষ আলেমগণ।