মো. রবিউল হোসেন, মানিকছড়ি:- খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে হাফেজ আব্দুল হালিম নামের এক মাদরাসা শিক্ষকের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুরুত্বর আহত ঐ শিক্ষক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানিকছড়ি কলেজ গেইট সংলগ্নে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে মানিকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আলেম ওলামা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও সহযোগী সংগঠন। বিক্ষুব্ধরা হামলার ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে প্রশাসনকে। অন্যথায় লাগাতার হরতাল, অবরোধের ঘোষণা দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ মো. আবদুল হালিম(৩০) মোটর সাইকেল যোগে রামগড় থেকে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। রাত পৌঁনে ১১টার দিকে মানিকছড়ি সরকারি কলেজের সামনে পৌঁছামাত্র সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁর মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে প্রথমে মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে! এতে হাফেজ মো. আবদুল হালিম বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে! পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে মানিকছড়ি উপজেলা হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক দ্রুত তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনা জানাজানির পর আলেম ওলামা, কওমী মাদরাসা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠে। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে মহামুনি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও সহযোগী সংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলার ঘটনা জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি নিয়ে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি আমতল চত্তরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের মানিকছড়ি কলেজ শাখার সভাপতি মোঃ মনির হোসেন বাবুর সঞ্চালনায় ও নাগরিক পরিষদ উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মহম্মদ জহির উদ্দিন বিন সুরুজের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মোকতাদের হোসেন। বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. কাউছার হোসেন, ছাত্র পরিষদের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ হোসেন প্রমূখ।
পরে একই স্থানে খাগড়াছড়ি কওমি মাদরাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করেন শত শত আলেম ওলামা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এসময় হাফেজ আবদুল হালিমের উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি ক্বওমি মাদ্রাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা ক্বারী ওসমান গনী, সাধারণ সম্পাদক মুফতি রবিউল ইসলাম শামিম, ওলামা নেতা হাফেজ মাওলানা ফজলুল হক, মাওলানা ইব্রাহিম খলীল আল ফরিদী, মাওলানা মহিউদ্দিন বিন সুরুজ, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন, মুফতি জসিম উদ্দিন, হাফেজ শরিফুল ইসলামসহ আলেম ওলামাগণ।
পৃথক সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ফিলিস্তানে নিরস্ত্র মুসলমানের ইসরায়েলের বর্বোরোচিত হামলায় বিশ্ব যখন তটস্থ। ঠিক সেসময়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা একজন আলেমে দ্বীন হাফেজে কোরআনের ওপর অযাচিত হামলা চালিয়ে তাকে মৃত্যুরমূখে ঢেলে দিয়েছে। ১৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যেতে চললেও এখনও হাফেজ মো. আবদুল হালিমের জ্ঞান ফিরেনি! আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দাসহ ঘটনায় জড়িত ও জনপদের আতংক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় জন্য প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলাম। এর মধ্যে এসব সন্ত্রাসী আইনের আওতায় না আসলে মানিকছড়িতে লাগাতার হরতাল, অবরোধ করার হুশিয়ারী দেন তারা’।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনচারুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে। আহত শিক্ষক চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় আহতের পরিবারের কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে পুলিশের অনুসন্ধানী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে’।