আলীকদম(বান্দরবান)প্রতিনিধি।
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজেকে বিক্রির ঘোষণা দিলেন বান্দরবানের আলীকদমের মামুন নামের এক যুবক। চিকিৎসার জন্য সহায় সম্বল শেষ, এবার নিজের শেষ বিন্দু দিয়ে মাকে বাচাঁতে চায় মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুন। গত ৪ মাস ধরে তার মাকে বান্দরবানের আলীকদম থেকে নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থ সংকটে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে শ্রমিক হিসেবে (১০ দশ) বছরের জন্য বিক্রির ঘোষনা দেন তিনি।
সুত্রে জানা যায়, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ৩নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা মো.নুরুল ইসলাম (৬০) এর একমাত্র পুত্র মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুন সে বান্দরবান সরকারী কলেজের অর্নাস ৩য় বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখার জন্য বান্দরবান সদরে এসে পৌরসভা এলাকার নিউগুলশান এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন আর লেখাপড়া শেষে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম চাকুরী করতেন। কিন্তুু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হঠাৎ করেই মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুন এর মায়ের শরীরে দেখা দেয় নানা অসুখের উপসর্গ। আর তাই দেরি না করেই সব ছেড়ে মাকে নিয়ে ছুটে যায় চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর কাছে।
মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুনের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তার মার জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত হয় গত চারমাস আগে,তখন থেকে চিকিৎসা চালাচ্ছি, জরায়ুতে স্টেজ ফোর, শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে, কিডনীত ছুয়েছে, বাম পাশের কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, ডান পাশেরটা চলমান রাখার জন্য অপারেশনের মধ্য দিয়ে পাইপ বসানো হয়েছে। বর্তমানে টাইফয়েড শনাক্ত হয়েছে,কেমোথেরাপি চলমান।
মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুন আরো জানান, বিগত সময়ে পার্কভিউ হসপিটালসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চিকিৎসা করিয়েছি, এই পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, এতে আমার ব্যক্তিগত ৮ লক্ষ টাকা আর বাকিটা ধার নেয়া।
মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুন আরো জানান, মায়ের জন্য আমি সব করতে পারি,তাই মাকে বাঁচাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে ১০(দশ) বছরের জন্য শ্রমিক/কামলা হিসেবে বিক্রি করতে ঘোষনা দিয়েছি, বৈধ যেকোনো কাজই আমি করতে পারবো। আমার সাথে এখনো কাজের সন্ধান দিয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি তবে কাজ পেলে আমি কাজে যোগ দেব এবং সেই অর্থ দিয়ে মায়ের পরবর্তী চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবো।
মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুন আরো জানান, আমার পিতা আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন উন্নত শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন, তিনি এখন বৃদ্ধ আর এই বয়সে আমি যদি মা আর বাবার দায়িত্ব নিতে না পারি তবে আমি সন্তান হিসেবে ব্যর্থ, আমি চাই যেকোন বৈধ কাজ করে অর্থ উপার্জন করবো আর মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাব।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে বিক্রি করে মাকে চিকিৎসা দেয়ায় ঘোষনায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই তার এই ঘোষনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে আর অনেকেই নিজ নিজ নাস্তার অর্থ ও অপ্রয়োজনে খরচ করা অর্থ মো.আনোয়ারুল ইসলাম মামুনকে প্রদানের জন্য আহবান জানাচ্ছে।
আলীকদম সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, মামুন নামে ছেলেটি অত্যন্ত আবেগী তার মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছেন। আমিও দেখেছি মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে শ্রমিক হিসেবে ১০ বছরের জন্য বিক্রির কথা বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আমাদের সকলের এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি।