রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন এর ৩ নং ওয়ার্ড কেপিএম কয়লার ডিপু কর্নফুলি নদী সংলগ্ন হতে কাটা পাহাড় হয়ে ২ নং ওয়ার্ড এর রেশম বাগান তনচংগ্যা পাড়ার শেষ মাথা পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার পানি ব্যবস্হাপনামূলক প্রকল্প নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন সরকারের স্হানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর ( এলজিইডি)। সরকারের “টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের” আওতায় ২.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আগামী ডিসেম্বর মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে জানুয়ারি ২০২১ নাগাদ এর নির্মান কাজ শুরু হবে বলে জানান তাঁরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য খাতে অপার সম্ভাবনার দাঁড় উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এলাকার জনগণ, জনপ্রতিনিধি এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এলজিইডি রাঙ্গামাটির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তাসাউর জানান, ৬ কিমি খালের ছড়ায় ৪ টি বাঁধ দিয়ে ছড়ার পাশে ধারক দেওয়াল নির্মান করে শুষ্ক মৌসুমে ড্রেইনের পানিকে ধরে রাখা হবে, ফলে এলাকার জনগণ কৃষি কাজে পানি ব্যবহার করতে পারবে এবং গৃহস্থালি কাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারবে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, রবি ও বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে অধিক ফলন সম্ভব হতো না, তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই দুই মৌসুমে অধিক ফলন ফলাতে পারবে কৃষকরা।
প্রকল্পের সমাজ বিজ্ঞানী কামাল হোসেন জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টেকসই কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এলাকার জনগণ যেমন কৃষি কাজের জন্য পানি পাবে, তেমনি বাঁধে মৎস্য চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী জানান, প্রকল্পটি একটি মডেল প্রকল্প, এটা এই অঞ্চলের জনগণের জন্য আর্শীবাদ হয়ে থাকবে। এখানে কর্মসংস্হান বাড়বে, জনগণ নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
এলাকার ২ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য নীহার রন্জন তালুকদার, ৩ নং ওয়ার্ড এর সদস্য আজিজুল হক মন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
এলাকাবাসী হোসনে আরা বেগম, জান্নাতুল মাওয়া, বিলকিস বেগম জানান, তারা পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারে না, তাই ছড়াতে পর্যাপ্ত পানি থাকলে তারা জমিতে সবজীচাষ সহ নানা কৃষি উপকরণ ফলাতে পারবে।
তবে প্রকল্পটি নিয়ে রেশম বাগান তনচংগ্যা পাড়া লোকজনের মধ্যে আতংক কাজ করছে। এলাকার বাসিন্দা শ্যামল তনচংগ্যা এবং রত্ন মনি তনচংগ্যা জানান, তাদের ৩০ পরিবার এই ছড়ার পাশে চাষাবাদ করে আসছে। প্রকল্পটির কারনে তারা কৃষি জমি হারাতে পারে।
এলাকার বাসিন্দা কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সমবায় কমিটির আহবায়ক সুব্রত বিকাশ তনচংগ্যা(জটিল), কাপ্তাই উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এলাকার বাসিন্দা সুধীর তালুকদার, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা এলাকার বাসিন্দা দয়ারাম তনচংগ্যা জানান, আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন হউক চাই, তবে এলাকার জনগণের কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় এবং সেই সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সমবায় কমিটিতে তনচংগ্যা পাড়ার অধিবাসীদের আরোও বেশী করে সম্পৃক্ত করে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাঙ্গামাটি এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তাসাউর জানান, প্রকল্পটির কারনে কোনভাবেই এলাকার কৃষি জমি, ক্ষেত্র নষ্ট হবে না। আমরা ছড়ার অংশটাকে খনন করে তাঁর উপরে ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবো।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে উপকারভোগীদের সম্পৃক্ত করা হয়ে থাকে, কাজেই এই ক্ষেত্রে এলাকার জনগণকে সস্পৃত্ত করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরোও জানান, এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে এর একটি সুফল প্রভাব পড়বে ঐ এলাকায় বসবাসরত জনগণের মাঝে। এটা একটি মডেল এবং মেগা প্রজেক্ট।
এদিকে গত রবিবার (২৯ নভেম্বর) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাঙ্গামাটির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তাসাউর। এইসময় কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণ এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।