গত কয়েক দিনের ভারী বষর্ণে রাঙ্গামাটি সীমান্তের ওপারের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুবলং চ্যানেলে পানির তীব্র স্রোতের কারনে দূর্ঘটনার আশঙ্কায় সোমবার (২০ জুন) সকাল থেকে রাঙ্গামাটির অন্তত ছয়টি নৌ-রুটে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহণ সংস্থা রাঙ্গামাটি জোন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক আদেশে ভারি বর্ষণ এর কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
রবিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার রাঙ্গামাটি জোন চেয়ারম্যান মো. মঈনুদ্দীন সেলিম ও যাত্রীবাহি লঞ্চের মালিক গিয়াস উদ্দিন আদর। তবে পরিস্থিতি উত্তরণ হলে মঙ্গলবার (২১ জুন) এ পথে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কথা রয়েছে। পরিস্থিতি সাপেক্ষ এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার রাঙ্গামাটি জোন চেয়ারম্যান মো. মঈনুদ্দীন সেলিম জানান, রাঙ্গামাটিতে গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সুবলং চ্যানেলে তীব্র স্রোতে স্বাভাবিক লঞ্চ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই ভারি বর্ষণ ও স্রোতের কারণে সোমবার (২০ জুন) থেকে রাঙ্গামাটির সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। প্রচন্ড স্রোতের কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনার সম্ভাবনার ঝুঁকি থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার স্রোতের পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ উপজেলা নিয়ে গঠিত দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটির ৭ উপজেলার সঙ্গে নৌ-পথে চলাচলের সুযোগ রয়েছে তবে কাপ্তাই উপজেলায় লঞ্চ চলাচল না করলেই অন্য ৬ উপজেলা বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচরে নিয়মিত লঞ্চ যাওয়া আসা করে। এর মধ্যে বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু ও বাঘাইছড়ির মানুষ জেলা সদর থেকে সরাসরি সড়কপথে যাতায়াতের সুযোগ নেই। লংগদু-বাঘাইছড়ির সঙ্গে সড়ক পথ থাকলেও সেটি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে যেতে হয়।
এদিকে, রাঙ্গামাটিতে সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল এর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৪ দিনের বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসলেও পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। উপজেলাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রিতদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসের আশংকায় প্রাথমিক ভাবে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ২৮টি ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে রাঙ্গামাটি শহরের ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে আনা হয়েছে। প্রবল বর্ষণে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন অংশে পাহাড় ধস ও রাস্তায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক স্বাভাবিক রাখতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাজ করে যাচ্ছে।