মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এর একটি হলো ঈদুল ফিতর। আর অপরটি ঈদুল আজহা, যাকে কোরবানির ঈদও বলা হয়। বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন ঈদুল ফিতরকে। এককথায় সবার কাছে পরিচিত ঈদ হিসেবে।
এসময়ে দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। সারাবছরে যত পণ্য ও সেবা কেনাবেচা হয়, এর বড় অংশ হয় এই ঈদে। ঈদ ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। তবে এই ধর্মের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে ঈদের প্রচলন শুরু হয়নি। ঈদুল আজহা কখন ও কোন প্রেক্ষাপটে চালু হয় তা ইতিহাস থেকে জানা যায়। কিন্তু ঈদুল ফিতর কখন ও কিভাবে প্রচলিত হয়, সে সম্পর্কে তথ্য কমই জানা যায়।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সে সময়কে ভিত্তি ধরে হিজরী সাল গণনা করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য হিজরী সাল গণনা শুরু হয় আরও ১৭ বছর পরে। খলিফা হজরত উমরের (রা.) সময়ে।
‘হিজরী প্রথম বছরের অষ্টম মাস। অর্থাৎ শাবান মাসে রোজা বাধ্যতামূলক করার আয়াত নাজিল হয়। পরে নবম মাস। অর্থাৎ রমজানে এক মাস সিয়াম সাধনাকে ফরজ করা হয়।
এরপর হিজরী দ্বিতীয় সালে বিধান দেয়া হয় রমজান মাস- চাঁদের হিসাবে ২৯ দিন বা ৩০ দিনেও শেষ হতে পারে। এটি শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উদযাপন করা হবে। ঈদের সামাজিকতা ওই সময় থেকে শুরু হয়।
এ বিষয়ে আনাস নামে মহানবীর একজন সাহাবা বা সাথীর বর্ণনা করা একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মদিনায় যাওয়ার পর নবী দেখলেন, সেখানকার মানুষ বছরে দুটি বড় উৎসব উদযাপন করেন। তিনি তখন জানতে চান, সেগুলো কী উৎসব? এগুলো ছিল নওরোজ ও মিহিরজান।যেগুলো সেখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম এবং গোত্রের রীতি অনুযায়ী একটি শরতে এবং আরেকটি বসন্তকালে উদযাপিত হতো।
ঈদ উৎসবের আদলে মুসলমানদের জন্য বছরে দুটি ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় উৎসব উদযাপনের রীতি প্রবর্তন করা হয়। ঈদের প্রচলন নিয়ে এর বাইরে আর কোনও বক্তব্য বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
ঈদ উদযাপন মদিনায় শুরু হলেও পরবর্তীতে পুরো দুনিয়ায় মুসলমানদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে প্রচলিত হয় ঈদ উদযাপন। কালক্রমে অঞ্চলভেদে এই উৎসবে ভিন্ন ভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়।
আরবি ঈদ শব্দের মানে খুশি, আনন্দ বা উৎসব। মুসলমানদের জন্য ঈদ উদযাপন ওয়াজিব অর্থাৎ অবশ্য পালনীয়। ঈদ উদযাপনের কিছু নিয়ম ইসলামে নির্দিষ্ট করা আছে।
এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, যা সব মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। এছাড়া ঈদুল ফিতরে ফিতরা দেয়াও অবশ্য পালনীয় রীতি। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিবের মাঝে বিতরণ করা হয়।
প্রথম ঈদের প্রচলন চালু হয়, তখন এখনকার ঈদের মতো আতিশয্য ছিল না। নবী মুহাম্মদ ঈদের দিনে গোসল করে উত্তম পোশাক পরে নামাজ পড়তে যেতেন। ঈদের নামাজের পর মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া এবং আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশী বন্ধুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ ছিল।
মুঘলরা ঢাকায় আসে ১৬১০ সালে। তখন তাদের পাঠানো নায়েব-নাজিমরা ঈদ উদযাঈদের চাঁদ উঠলে তারা আনন্দ-উৎসব শুরু করতেন। কামান দাগা হতো। ঈদের দিন একসঙ্গে নামাজ পড়তেন। নামাজ পড়ে ফেরার পথে হাতি বা ঘোড়ার পিঠ থেকে সাধারণ মানুষের দিকে পয়সা ছুড়ে দিতেন। ঈদ তাদের নিজেদের মধ্যেই উদযাপিত হতো। সাধারণ মানুষের সেটার সঙ্গে সংযোগ ছিল না,মুঘলদের তৈরি ঈদের একটা প্রতীক এখনো ঢাকায় আছে। সেটি হচ্ছে ধানমন্ডি ঈদগাহ।
ঈদ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে রোজা বা ঈদ উদযাপনের তেমন চল ছিল না। সেই সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো ছিল না।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এ অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেসময় ঈদ উদযাপন বাড়তে থাকে বলে উল্লেখ করা হয় বিভিন্ন ইতিহাসবিদের লেখায়। একসময় দিল্লির মুঘলদের অনুকরণে ঢাকায় ঈদের মিছিল হতো।
ইতিহাসবিদদের মতে, বর্তমানে ঈদ যেমন ব্যাপক উৎসবের আকার পেয়েছে, এর শুরুটা হয় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যা আস্তে আস্তে বিস্তৃত হতে থাকে। এর আগে ঈদ উদযাপনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা।আনুষ্ঠানিকতার প্রায় পুরোটাই ছিল ঢাকাকেন্দ্রীক। যে কারণে ঐতিহাসিক বর্ণনায় ঢাকার ঈদ সম্পর্কেই জানা যায়।
১৮৮৫ সালে ঐতিহাসিক জেমস ওয়াইজের লেখা উল্লেখ করে অধ্যাপক মামুন বলেন, ওই সময় গ্রামাঞ্চলে ঈদের উদযাপন একেবারে কম ছিল। এমনকি অনেক জায়গায় ঈদের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, তা-ও অনেকে সঠিকভাবে জানতেন না। মসজিদের সংখ্যাও সেসময়ে কম ছিল। এখন ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বেড়েছে। মুসলমানের সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে ঈদ উদযাপনের পরিধিও বেড়েছে।
বর্তমানে করোনা মহামারির ২ বছর পর দেশজুড়ে বড় উদযাপনে পরিণত হয়েছে ঈদ। এর বড় কারণ একে ঘিরে তৈরি হওয়া অর্থনীতি।বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টায় সকলকে ভ্যাকসিনেশনে আনার ফলে মৃত্যু ঝুঁকি কমেছে,পাশাপাশি উন্নয়ন চলমান রাখার ফলে সবমিলিয়ে এবারের ঈদটা একটু আনন্দ ময় হচ্ছে।
অন্যদিকে পার্বত্য এলাকা রাঙ্গামাটির বনরুপা,রিজার্ভ বাজার,তবলছড়িতে ঈদের জামাত অনুষ্টিত হয়েছে,সরোজমিনে দেখাগেছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একযোগে ঈদ উৎসব পালন করতে দেখা গেছে।
এদিকে মুঠোফোনে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ফজলুর রহমান জানিয়েছেন,নানিয়ারচরে সকল ধর্মের লোকেরা শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উৎসব পালন করছেন,ঈদ উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে সকল ধর্মের মাঝে।