পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে বৈ-সা-বি উৎসবের আমেজ। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বসবাসরত ১৩টি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি। চাকমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা ও মারমা জাতিগোষ্ঠির মানুষ আলাদা নামে হলেও একযোগে পালন করে এ উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই আর তংচঙ্গ্যারা বিষু নামে এ সামাজিক উৎসব পালন করে ।
উৎসবকে ঘিরে নানান রঙে সাজতে শুরু করেছে পুরো পার্বত্য এলাকা। সপ্তাহ জুড়ে চলবে এ উৎসব। সোমবার বিকেলে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউট প্রাঙ্গণে বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু মেলার উদ্বোধন করে উৎসবের সূচনা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ইমতাজ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য অংসু্ইছাইন চৌধুরী, সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া, সদস্য মো. হাজী মুছা মাতব্বর, সদস্য ঝর্ণা খীসা, রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা প্রমূখ।
পাহাড়ে প্রধান ও সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি পালন করা হচ্ছে এবার সারম্বরে। গেল দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে উৎসবের আয়োজন বন্ধ ছিল। এবার করোনামুক্ত পরিবেশে সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়ের মানুষ। বৈ-সা-বি উৎসবের বর্ণিল আয়োজনে ৪ এপ্রিল সোমবার বিকালে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া ৫ দিনের বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু সংস্কৃতি মেলা শেষ হবে ৮ এপ্রিল।
মেলার ৩০টি ষ্টলে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর আলোকচিত্র, ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র ও হস্ত সামগ্রী প্রদর্শনী হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে নানান খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। এর আগে বিজু সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু তথা বৈ-সা-বি উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সষ্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় পাহাড়িদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ ডিসপ্লে।
১২ এপ্রিল উৎসবের প্রথম দিন চাকমা, ত্রিপুরা ,তংচঙ্গ্যা জাতির ফুল বিজু বৈসুক কিংবা বিষু । এদিন গঙ্গা দেবীর আরাধনায় নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরদিন ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু, বৈসুক বা বিষুু। এদিন প্রতি ঘরে রান্না হবে ঐতিহ্যবাহী পাজন। ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। আর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মারমাদের ঐ্যতিহ্যবাহী জল খেলা তথা পানি খেলা উৎসব। মারমা তরুণ তরুণীর জলখেলায় অংশ নিয়ে উৎসবে মেতে উঠে।
এবার করোনামুক্ত পরিবেশে বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, বিহু ও বাংলা নববর্ষ-২০২২ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে নানান অনুষ্ঠান মালা। এ বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার কারণে রাঙ্গামাটিসহ পাহাড়ের সর্বত্র বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই উৎসব আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হবে এবং এর মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে বলে এমন আশা সকলের।