পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি গ্রামের কোনো বাড়িতে জ্বলছে বিদ্যুতের আলো, চলছে টেলিভিশন ও কম্পিউটার। পাঁচ বছর আগে এই দৃশ্য কেউ ভাবতে পারেনি। কিন্তু এটি এখন রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের স্বাভাবিক ঘটনা। সৌরবিদ্যুতের কল্যাণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা দিক দিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তারই পাশাপাশি পাহাড়ের বসে খবরা-খবর দেখতে ও পড়তে পারছে ও যোগাযোগ সু- ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাইন্দু চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা। রুমা কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান।
সৌরবিদ্যুৎ যেন আক্ষরিক অর্থেই বিপ্লব ঘটিয়েছে এই ইউনিয়নে। কেবল এখানে নয়, আলো ছড়িয়ে পড়েছে বান্দরবানে রুমা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম লোকালয়ে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের মোট পরিবার সংখ্যা ১হাজার ৪শত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন বোর্ড সৌর প্যানেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পাইন্দু ইউনিয়নের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ২শত পরিবার পেল ১শতওয়াট ও ৫শত পরিবার পেল ৬৫ওয়াট ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের সৌর বিদ্যুৎ। আর তারই সাথে পাইন্দু ইউনিয়নকে আলোকিত করতে টি.আর কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প থেকে ২শত ৮০টি পরিবারকে সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে ও গীর্জায় সৌরবিদ্যুৎ প্রদান ২০ওয়াট ৩০ওয়াট অর্থবছরের ২০১৮-২০১৯-২০২০সালে বিতরণ করা হয়েছিল বাকি ৩শত ৭০ পরিবারকে সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ করতে পারলে ৯৯শতাংশ হবে বলে জানিয়েছেন উহ্লামং চেয়ারম্যান।
এদিকে গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের সৌরবিদ্যুৎ বিতরণে অনিয়নের বিষয়ে বান্দরবানের রুমায় স্যাটেলাইট চ্যানেল ৭১’টিভি’তে প্রচারিত সংবাদটির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ১২ আগস্ট রুমার ৪নং গালেঙ্গ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শৈউসাই মারমা।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শৈউসাই মারমা বলেন গত ১০ আগস্ট ৭১’টিভির সূর্যলোকের অন্ধকার টিম কর্তৃক তিন পার্বত্য জেলায় সরকারী সৌর বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ে তিন কোটির টাকার বাণিজ্য উল্লেখ করে প্রচারিত সংবাদে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমাকে জড়ানো হয়েছে।
আমি এতে সামাজিক, মানসিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে আমার অবর্ণনীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি ৭১’ টিভি প্রচারিত সংবাদটি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন গালেঙ্গ্যা ইউপি চেয়ারম্যান শৈউসাই মারমা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন, বিগত ২০১৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে প্রকৃত উপকারভোগিদের মাঝে সোলার প্যানেল গুলো সুষ্ঠভাবে বিতরণ করা হয়েছিল। চেয়ারম্যান শৈউসাই অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলণে বলেন সামনে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন বছর পর ইউপি চেয়ারম্যান সম্ভাব্য প্রার্থী ও গালেঙ্গ্যা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক যুগেজ ত্রিপুরা আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য জন্য পরিকল্পিতভাবে আমার নাম ভাঙ্গিয়ে তাঁর (যুগেজ ত্রিপুরা) নিকটাত্মীয় – স্বজনদের শিখিয়ে -পড়িয়ে ৭১’টিভির সাংবাদিক দ্বারা আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করিয়ে কুৎসা ছড়াচ্ছে।
অপরদিকে ২নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈবং মারমা ও ৩নং রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিরা বম বলেন, আমাদের ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত সৌরবিদ্যুৎ শত ভাগ উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো শামসুল আলম উপস্থিতে বিতরণ করেছিলাম। বিতরণকালে ভুক্তভোগী নাম তালিকা দেখে অসহায় হতদরিদ্র পরিবারদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।
সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা গেছে, একটি পরিবারে চারটি বাতি জ্বালাতে ৫০ ওয়াট ক্ষমতার একটি সৌর প্যানেল প্রয়োজন। নগদ কিনলে এমন একটি প্যানেলের খরচ পড়বে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং তিন বছরের কিস্তিতে কিনলে ২৭ হাজার ১০০ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রান্তিক এলাকার বহু পরিবার সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পেয়ে খুশি। ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে পলি প্রাংসা গ্রামের দুই সন্তানের বাবা চিংসানু মার্মা বলেন, ‘বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের পর আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে পড়াশোনায় অনেক সুবিধা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির ছোটখাটো কাজগুলো প্রয়োজনে গভীর রাত পর্যন্ত করা যায়।’
এদিকে গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের নাইতং পাড়ার (বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক ব্যক্তি বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ একদিকে কেরোসিনের চেয়ে অনেক কম খরচ। আর শুধু সুইচ টিপে চালাতেও সুবিধা। এখন আমাদের দুর্গম পাহাড়ে সৌরবিদ্যুৎ খুবই জনপ্রিয়।’ তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও সহজ শর্তে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মনে করেন।