চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বাতিল হওয়া ১’শ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা আগের জায়গাতেই বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল স্থাপনে পুনরায় প্রস্তাবনা দেয়া হচ্ছে। অনেক দূর এগোলেও কেবল জায়গা সংক্রান্ত জটিলতায় একশ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের ওই প্রকল্পটি বাতিল করে চীন সরকার। তবে এক দফায় বাতিল করলেও ২য় দফায় আরো একটি প্রস্তাব দেন দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত। বিশেষায়িত ইউনিটের পরিবর্তে চট্টগ্রামে এবার বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল স্থাপনে আগ্রহের কথা জানিয়েছে দেশটি। আর সেটি হবে চীন সরকারের শতভাগ অনুদান সহায়তায়। চীনের প্রস্তাব অনুসারে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালটির নাম হবে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল’। চীনের ২য় দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিশেষায়িত এ হাসপাতাল স্থাপনের লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন জায়গা পরিদর্শনে আসেন। এসময় চমেক হাসপাতালের পেছনে বাতিল হওয়া আগের প্রকল্পটির জন্য চিহ্নিত ওই জায়গাটিই পুনরায় প্রস্তাব করেছে চমেক হাসপাতাল প্রশাসন। স্বাস্থ্যের সচিব ও ডিজিসহ সংশ্লিষ্টরা ওই জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এসময় চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চমেক উপাধ্যক্ষ ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনের সময় এবং পরবর্তীতে সার্কিট হাউজের বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল হোক, এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া। ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আদলে চট্টগ্রামেও আধুনিক একটি হাসপাতাল করতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। চীন সরকার এর জন্য অর্থায়ন করবে। অর্থাৎ টাকা হাতে আছে আমাদের। কেবল জায়গা সিলেক্ট করতে পারিনি এতদিন। এই বিষয়টি নিয়েই আজকে এখানে এসেছি।
আমরা চাই চমেক হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভিতরেই বিশেষায়িত এই বার্ন হাসপাতালটি হোক। আমরা যে জায়গাটি দেখলাম, সেটিতে করার প্রস্তাবনা আমরা দেব। বহুতল ভবন হবে। প্রয়োজনে উপরে ব্রিজ করে মূল হাসপাতাল ভবনের সাথে কানেক্টিং করা হবে। স্পেশালিস্ট হিসেবে ডা. সামন্ত লাল সেনও আছেন আমাদের সাথে। তিনি বিষয়টি হ্যান্ডল করবেন।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, অনেকেই অন্য জায়গায় এ হাসপাতালটি করার কথা বলছেন। কিন্তু আমরা বলছি নো, সবগুলোই হবে মেডিকেলের আশেপাশে। এগুলো ব্রিজ করে কানেক্ট করে দেয়া হবে। এতে স্টুডেন্টরা উপকৃত হবে। আমাদের ডাক্তাররা অন্য জায়গায় হলে যাবেন না। একই কম্পাউন্ডে হলে আমরা তাদের কাছে সেবা পাব। রোগীরাও উপকৃত হবে।
আমরা চাই, চট্টগ্রাম থেকে কোনো পোড়া রোগী যাতে ঢাকায় নেয়ার পথে আর মারা না যান। এই রোগীরা যেন চট্টগ্রামেই ঢাকার মতো উন্নত চিকিৎসা পান। আমরা হাসপাতাল কম্পাউন্ডেই করতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা দরকার। বিশেষ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী, তিনি সমপ্রতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বও পেয়েছেন। উনি যাতে বিষয়টি দেখেন, সে আবেদন রাখছি। পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রীও যাতে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন।
সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সমপ্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা এখন জায়গা দেখে গেলাম। বিষয়টি ইআরডির মাধ্যমে চাইনিজ অ্যাম্বাসিতে আমরা জানাব। তারা এসে নিজেরাও জায়গা দেখবেন। শীঘ্রই যাতে তাদের নিয়ে আসতে পারি, আমি সে চেষ্টা করব। বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি যাতে এবার কোনো ভাবেই হাতছাড়া না হয়, সে বিষয়টিও তিনি দেখবেন বলে জানান ডা. সামন্ত লাল সেন।
জায়গা পরিদর্শনের আগে চমেক হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে সংক্ষিপ্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের জন্য জায়গা চিহ্নিত করণ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। চট্টগ্রামের জেলাপ্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি জায়গা পরিদর্শনের সময় থাকতে পারেননি।