মোঃ সিরাজুল মনির:
ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ৭টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টিতে বিধি ভঙ্গ করে উৎসব ভাতা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিধি অনুযায়ী, উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার আগের মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ভাতা হিসেবে পাওয়ার কথা।
সেই হিসেবে কোরবানির ঈদ জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ায় জুন মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ঈদ বোনাস হিসেবে পাওয়ার কথা থাকলেও জুলাই মাসের মূল বেতনের হিসেবে উৎসব ভাতা দেওয়া হয়েছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, এলপি গ্যাস লিমিটেড এবং ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডারস লিমিটেডে (ইএলবিএল)। এতে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা গচ্ছা গেছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। তবে অন্য দুই অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি ও স্টান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল) বিধি মোতাবেক ভাতা নেওয়া হয়। জানা যায়, বিধি মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে দুটি উৎসব বোনাস পেয়ে থাকেন। অর্থ বিভাগের ১৯৯২ সালের ১৬ জুন তারিখের অম/অবি/(বাস্ত-৪)উঃভাতা-১০/৯০/ ৩২ স্মারকে উল্লেখিত পত্রে উৎসব ভাতার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, ‘কোন কর্মচারী যে মাসে উৎসব অনুষ্ঠিত হইবে উহার অব্যবহিত পূর্ববর্তী মাসে আহরিত মূল বেতনের সমান অর্থ উৎসব ভাতা হিসেবে পাইবেন অর্থাৎ কোন কর্মচারী উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার মাসের অব্যবহিত পূর্বের মাসে বার্ষিক বর্ধিত বেতনের সুবিধা প্রাপ্য হইয়া থাকলে বর্ধিত বেতন যদি পূর্ববর্তী মাসের ১ তারিখে না হইয়া উক্ত মাসের পরবর্তী যে কোন তারিখে হইয়া থাকে, তাহা হইলে ঐ বাবদ বর্ধিত বেতনের প্রাপ্য অংশ ঐ মাসের মূল বেতনের সহিত যোগ করিয়া মাস শেষে তিনি মূল বেতন হিসাবে যাহা আহরণ করিবেন, তাহা উৎসব ভাতা হিসাবে পাইবেন।’
কিন্তু বিধি না মেনে বিপিসির ৫টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর জুলাই মাসের মূল বেতনের হিসেবে উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়েছে। বিধি না মানায় সব মিলিয়ে প্রায় ২৯ লাখ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে প্রতিষ্ঠান ৫টির। তথ্য অনুযায়ী, বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ৭টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৮৫০ জন নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, এলপি গ্যাস লিমিটেড ও ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডারস লিমিটেডে প্রায় ২ হাজার নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এদের গত জুন মাসের মূল বেতন (বেসিক) ছিল প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। জুলাই মাসের বেতনে বিধি মোতাবেক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়। এতে জুলাই মাসের মূল বেতন দাঁড়ায় প্রায় ৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। এতে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হওয়ার কথা। সেই হিসেবে যুক্ত ইনক্রিমেন্টের সমপরিমাণ অর্থ উৎসব ভাতায় গচ্ছা দিতে হয়েছে এই ৫ প্রতিষ্ঠানকে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ফাইনান্স অ্যান্ড একাউন্টস) মো. শাহিরুল হাসান নিশ্চিত করেছেন, তাদের কোম্পানিতে বিধি মোতাবেক জুন মাসের মূল বেতনের হিসেবে এবারের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তবে বিধি মানা হয়নি মেঘনা পেট্রোলিয়ামে। মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) সঞ্জীব নন্দী জুলাইয়ের হিসেবে বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
যমুনা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (এইচআরও ফাইন্যান্স অ্যান্ড একাউন্টস) মো. মাসুদ করিম বলেন, যমুনা অয়েলে জুলাই মাসের মূল বেতন হিসেবে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। অনেক আগে থেকেই যমুনা অয়েলে যে মাসে উৎসব, সেই মাসেই বোনাস দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
তবে পদ্মা অয়েলে কোন মাসের হিসেবে উৎসব ভাতা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের কর্ণধার উপ-মহাব্যবস্থাপক (একাউন্টস) ও সিএফও কাঞ্চন চন্দ্র সোম। উৎসব ভাতা নির্ধারণের নিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখে বলতে হবে। এছাড়া ঈদুল আজহার উৎসব বোনাস কোন মাসের (জুন নাকি জুলাই) বেসিক বেতনের হিসেবে প্রদান করা হয়েছে জানতে চাইলেও একই উত্তর দেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা অয়েলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জুলাই মাসের মূল বেতন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে উৎসব ভাতা দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে এলপিজিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এঅ্যান্ডএফ) মো. নেয়ামত উল্লাহ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন। পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু হানিফের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বলতে এগুলোও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। বিধি ভঙ্গ করে অতিরিক্ত সুবিধা নেওয়ার সুযোগ কারো নেই। কারণ এগুলো নাগরিকদের টাকা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকে বলেই অধঃস্তন কর্মচারীদের খুশি করার জন্য এসব অনিয়ম করা হয়। কারণ এখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করেই সরকারি অর্থের নয়ছয় করা হয়েছে। এটাও দুর্নীতির অংশ। এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।